বিরোধী দলের সাংসদদের দুই দফা বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে জানা দরকার। বাংলাদেশ অন্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত। আপনারা বলছেন, ব্যাংক, শেয়ারবাজার সব খালি করে ফেলেছি। আপনাদের সময় পুঁজিবাজার কী ছিল? আপনাদের সময় ইনডেক্স কী ছিল? এবার সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। অর্থনীতিতে ওঠানামা থাকে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের টাকায় হয়েছে। লাভের সময় ইচ্ছেমতো বোনাস নেবে, বিদেশে ঘুরবে, তা হয় না।
মুজিবুল হক চুন্নুর বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাইফুর রহমান চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছিলেন। আমিও তা–ই। আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। পারসোনাল লেবেলে কথা বলবেন, এটা ঠিক নয়। আমিও অনেক কিছু বলতে পারি। সবারই বিষয়েই আমি জানি।’ অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, একমাত্র রপ্তানি–বাণিজ্য নেতিবাচক। এটা ছাড়া একটি খাতেও দেশ পিছিয়ে নেই। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জেপি মর্গান সবাই মনে করে জিডিপি আট ভাগের কম হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন নিয়ে তিনি আশাবাদী ছিলেন। তবে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিছুসংখ্যক ভ্যাট মেশিন আনা হয়েছে। রাজস্ব আহরণ শেষ পর্যন্ত নেতিবাচক থাকবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার আরও ভালো করা উচিত। যে জায়গায় পুঁজিবাজার থাকার কথা, সে জায়গায় নেই। টাকা পাচারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, টাকা পাচারের সংখ্যা কীভাবে নির্দিষ্ট করে বলা হচ্ছে। যাঁরা বলছেন, তাঁরা কি অংশীদার? না হলে হয় অভিযোগ করতে হবে, নয়তো সাক্ষ্য দিতে হবে। তবে অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন টাকা পাচার হচ্ছে।
ওনার মূল পরিচয় ব্যবসায়ী
অর্থমন্ত্রীকে ব্যবসায়ী বলাতে উষ্মা প্রকাশ করায় জাপার সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, ‘আমি একজন অ্যাডভোকেট। এটা বললে কি অপরাধ হবে? উনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কিন্তু উনার মূল পরিচয় একজন ব্যবসায়ী। এটাতে আহত হওয়ার কারণ নেই।’
ওয়াকআউট
পরে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ দাঁড়িয়ে বলেন, তাঁরা সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেননি। জনমত যাচাই করতে বলেছেন। কিন্তু তাও করা হয়নি। বিলটি পাস করা হচ্ছে। তাই তাঁরা ওয়াকআউট করছেন। তাঁর বক্তব্যের পর হারুনসহ বিএনপির তিনজন সাংসদ অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন।
এই অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন
পাস হওয়া বিলে বিলে মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। এ ছাড়া আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে।
বিলটি উত্থাপনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ অন্য স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর শেষে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাবগুলোর স্থিতি থেকে দেখা যায় যে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমে আছে। সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের। সে কারণে এই অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।