Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Monday 3 November 2014

নারীমুক্তির আড়ালে ধর্ষণের শিকার মেয়েরা...

বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিবেদন এবং পুলিশের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ধর্ষণ বাড়ছে ৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এর জন্য আইনের প্রয়োগে ঢিলেমি এবং সামাজিক অবস্থা দায়ী৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়টি প্রায়ই উঠে আসে৷
দেওয়ান তানভীর আহমেদ ধর্ষণের সাথে মেয়েদের পোশাকের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা নিয়ে লিখেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর যেসব মন্তব্য শুনতে হয় তা হলো, ‘এক হাতে তালি বাজে না!, মাইয়ারা কি দুধে ধোয়া? মাইয়াগো চলন বলনের ঠিক নাই, কাপড় চোপড়ের ঠিক নাই, এমনে চললে তো ধর্ষণ হইবই! আরে মিয়া ধর্ষণের লাইগা তো মাইয়ারাই দায়ী! মাইয়াগো যদি পর্দা ঠিক না থাকে তাইলে তো ধর্ষণ হইবই! মাইয়া মানুষ পর্দা না করলে পুরুষ মানুষের তো নজর লাগতেই পারে!'''
তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘‘আসলেই কি পর্দা নামক জিনিসটি গায়ে চাপিয়ে ধর্ষণ ঠেকানো সম্ভব?'৷ তানভীর বেশ কিছু জরিপ এখানে তুলে ধরেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র জরিপ অনুযায়ী ধর্ষিতা নারীদের মধ্যে ৪৮% নারী বোরকা পরিধানকারী, ৪১% নারী সালোয়ার কামিজ বা শাড়ি পরিধানকারী এবং বাকি ১০% অন্যান্য পোষাক পরিধানকারী৷''
তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যেখানে বোরকা পরিধানকারী নারীরাই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, সেখানে বোরখা বা বোরকা কীভাবে নারীকে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, আপনারাই বলুন?''
তিনি আরো একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘আপনারা কি কখনো কুকুরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা ব্যাপার লক্ষ করেছেন? যদি আপনি একটা কুকুরের সামনে দিয়ে ধীরে সুস্থে হেঁটে চলে যান, তাহলে কিন্তু কুকুরটা আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না৷ কিন্তু যদি আপনি কুকুরটার সামনে দিয়ে ঝেড়ে দৌড় দেন, তাহলে কিন্তু কুকুরটা আপনার পিছনে ধাওয়া করবে৷ অর্থাৎ আপনাকে নিজের চাইতে দুর্বল ভেবে কুকুরটি ধাওয়া করবে৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘মেয়েদের সাথেও ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে৷ আমাদের সমাজের কিছু সংখ্যক লোক নিজেদের নোংরা চরিত্র ঢাকার জন্য ধর্ষণের জন্য মেয়েদের দায়ী করে৷ আর যখন তারা দেখে যে তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে কোনো মেয়ে বস্তাবন্দি হচ্ছে, তখন তারা ধরে নেয় মেয়েটি দুর্বল৷ আর তখনই তারা মেয়েটির দুর্বলতার সুযোগ নেয়! পোশাক যেমন ধর্ষণের কারণ নয়, ঠিক তেমনি পোশাক কখনোই ধর্ষণ ঠেকাতে পারে না৷''
তিনি নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, অন্যকে নিজের দুর্বলতার সুযোগ দিতে নেই৷ তাই কেউ আপনার গলা টিপে ধরবার আগে তারই গলা টিপে ধরুন৷ এটাই প্রতিবাদ, এবং প্রতিবাদেই সমাধান৷''
রাজীব নুর একই ব্লগে ধর্ষণ সম্পর্কে যে লেখাটি লিখেছেন তার শিরোনাম, ‘‘আমি একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছি৷'' তিনি লিখেছেন, ‘‘উন্নত দেশেও ধর্ষণ হয়, অপরাধ হয়৷ তবে সে দেশে অপরাধের অন্তত বিচার হয়৷ আমাদের দেশেও অপরাধ হয় – অপরাধী রাজার হালে বুক ফুলিয়ে ঘোরে৷ কোনো বিচার হয় না৷''
তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘যশোর বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম৷ আমার ঘুম আসছিল না, তাই কার্লভাটের উপর বসে ছিলাম৷ হঠাত দেখি – একটা মেয়ে আমার দিকে দৌড়ে আসছে৷ মেয়েটি আমার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আমাকে বাঁচান৷ এই সময় দেখি আমার চারপাশে চারজন লোক আমাকে ঘিরে ফেলেছে৷' একজন আমাকে বলল, ‘কোনো ঝামেলা করবেন না৷ আমরা এই মেয়েটিকে নিয়ে যাব৷' তাদের চারজনের হাতে পিস্তল, ছুরি, রাম-দা৷ আমি বললাম, ‘আমি কোনো ঝামেলা করবো না৷ আপনারা মেয়েটিকে নিয়ে যেতে পারেন৷'''
তিনি লিখেছেন, ‘‘মহাজোট সরকারের ৪ বছরে ১৩ হাজার ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ৬৭ হাজার৷ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার সচেতনতার মাধ্যমই হল এর এক মাত্র প্রতিষেধক৷ পত্রিকার পাতায়, কলামে কলামে, থানায় পুলিশের ডাইরিতে, আদালতে অসভ্য উকিলের আপত্তিকর জেরায় – একটা মেয়ের জন্যে কেউ নিরাপদ না৷ শিক্ষক, সহপাঠী, বন্ধু, বয়-ফ্রেন্ড, এলাকার ছেলে, আত্মীয় – পুরুষ, চাচা-মামা-খালু, দুলাভাই কেউ না৷ কর্মক্ষেত্রে কলিগ, অফিসের বস – সুযোগ পেলেই মিষ্টি হাসি ঝেড়ে ধর্ষকের রূপ ধরতে মুহূর্ত দেরি করেন না৷ বাসের হেল্পার, ক্যান্টিনবয়, হাসপাতালের ঝাড়ুদার, বাসার দারোয়ান কিংবা অফিসের পিয়ন – কেউই বাদ যায় না৷''
রাজীব বলতে চেয়েছেন, ‘‘একজন খুনির যদি সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে, তবে একজন ধর্ষকের কেন নয়? ভোগবাদী সমাজে নারীমুক্তির স্লোগানের আড়ালে নারীরা চিরকালই ভোগের পণ্য? যে দেশে নারী সরকার, যে দেশে নারী বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার নারী, নারী সংসদ সদস্য, সে দেশে কেন এত নারী ধর্ষণ? নারী নির্যাতন? কেন? কেন? কেন?''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ