Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 31 October 2014

'বাংলাভাই' যুগে ফিরতে চায় জেএমবি

'বাংলাভাই ও শায়খ আবদুর রহমান' যুগে ফিরতে নতুন পরিকল্পনা করছে জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। নিষিদ্ধঘোষিত এ সংগঠনের একাংশের প্রধান সোহেল মাহফুজের পরামর্শে এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি জেলায় গোপনে নতুন কমিটি তৈরি করা হয়।
সাহাদাত হোসেন পরশ
'বাংলাভাই' যুগে ফিরতে চায় জেএমবি'বাংলাভাই ও শায়খ আবদুর রহমান' যুগে ফিরতে নতুন পরিকল্পনা করছে জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। নিষিদ্ধঘোষিত এ সংগঠনের একাংশের প্রধান সোহেল মাহফুজের পরামর্শে এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি জেলায় গোপনে নতুন কমিটি তৈরি করা হয়। এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে সম্প্রতি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সম্পৃক্ত অন্তত দু'জনের সঙ্গে বাংলাদেশে পলাতক কয়েক জঙ্গির যোগসূত্রের তথ্য এখন গোয়েন্দাদের হাতে। বর্ধমান বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার আগে শামীম আহমেদ ও শোভন মণ্ডল বাংলাদেশের কয়েকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বর্ধমান বিস্ফোরণের পর পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিবিরোধী অভিযানজোরদার হলে বেশ কয়েকজন জঙ্গি বাংলাদেশে ফেরত আসে, যাদের সঙ্গে একসময় শামীম ও শোভনের সুম্পর্ক ছিল। ভারতফেরত এমন কয়েকজন জঙ্গি এখন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। যে কোনো সময় তারা আটক হতে পারে। এ ছাড়া কারাগারের অভ্যন্তরে থেকেও বিভিন্ন কৌশলে জঙ্গিরা সঙ্গীদের নানা তথ্য আদান-প্রদান করছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা।
গত ২ অক্টোবর বর্ধমান বিস্ফোরণের পর এখনও ভারত সরকারের কাছ থেকে দাপ্তরিকভাবে কোনো তথ্য পায়নি বাংলাদেশ। ওই বিস্ফোরণে জেএমবির যোগসূত্রতা রয়েছে বলে জানায় ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।এ ব্যাপারে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান সমকালকে বলেন, বর্ধমানে যে ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, তা জেএমবির বলেই মনে হয়। ভারতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার পর জঙ্গিদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ফেরত আসে। জেএমবিকে নতুনভাবে সংগঠিত করার সঙ্গে সম্পৃক্তদের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি জেলায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বর্ধমান বিস্ফোরণে নিহত দু'জনের ব্যাপারে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
জঙ্গিদের কার্যক্রম নিয়ে খোঁজ রাখেন এমন একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমকালকে জানান, জেএমবি তার 'সোনালি' যুগে ফেরত যেতে নতুনভাবে সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুড়িগ্রাম, যশোরসহ অনেক জেলায় গোপন কমিটি করা হয়। এসব কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে, তাদের তালিকা সংগ্রহ করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া জেএমবির সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের একটি অংশের গোপন সম্পর্কের তথ্য মিলেছে।
সূত্র জানায়, বর্ধমান বিস্ফোরণে নিহত জঙ্গির ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত কয়েকজন জঙ্গির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। তারা বিভিন্ন সময় ভারতে যাতায়াত করত। বাংলাদেশ থেকেও কয়েকটি মোবাইল নম্বরে ভারতে অবস্থানরত জঙ্গিদের সঙ্গে কথা হয়। কথোপকথনে তারা বেশ কিছু সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করত। বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। প্রথমে তারা রাজশাহীতে ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা করছিল। এর পর ধীরে ধীরে রাজধানীতে গোপন আস্তানা তৈরি করে বড় হামলার ছক করেই এগোতে চেয়েছিল জেএমবি।
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতে বসে জেএমবির বাংলাদেশকে ঘিরে নাশকতা তৈরির এত বড় পরিকল্পনা ফাঁস হলেও দেশের দায়িত্বশীল কোনো গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ভারতে গিয়ে বিষয়টির ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেননি। ভারতের গণমাধ্যমের সূত্র ধরেই অনেক কথা বলাবলি হচ্ছে। পুরো বিষয়টি যত গুরুত্বসহকারে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বর্ধমান বিস্ফোরণের পর জেএমবির অনেক সদস্য গা-ঢাকা দিয়েছে।
জেএমবির শীর্ষ অন্তত চার নেতা বর্তমানে ভারতে পলাতক রয়েছে। তারা হলেন জেএমবির একাংশের আমির সোহেল মাহফুজ, সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি, সংগঠনটির বোমা বিশেষজ্ঞ মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান ও ফারুক হোসেন। তাদের মধ্যে সানি ও বোমারু মিজানকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। সোহেল মাহফুজসহ অন্তত চার শীর্ষ জেএমবি নেতা ভারতে বসেই বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। সেখানে বসেই পরিকল্পনা করা হয় বাংলাদেশে নাশকতার। কারাগারে ঈদের বিশেষ জামাতে জেএমবি নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের জসীমুদ্দীন বয়ান দিয়েছেন বলে তথ্য আছে। ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার আগেও কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে জেএমবির কয়েক সদস্য নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে।২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিবাদবিরোধী কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়। এর পর জেএমবিসহ অনেক জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন সদস্য রাকিবুল, সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর জেএমবি নতুনভাবে তাদের শক্তির জানান দেয়। ওই ঘটনার পর রাকিবুলকে আটক করা হলেও সানি ও মিজানকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে রাকিবুল পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জেএমবির সদস্যরা তাদের আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে ভারতের মুর্শিদাবাদের নাগরিক মজিবুর রহমানকে মানতেন। এ ছাড়া শূরা সদস্য রাকিবুল হাসান একসময় মুর্শিদাবাদের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। ১৯৯৭ সালে দেশে ফেরার পর শায়খ আবদুর রহমানের পরামর্শে জেএমবি তৈরি করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গিদের ব্যাপারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে ঝিমিয়ে পড়ে জঙ্গিদের তৎপরতা। দীর্ঘদিন পর চলতি বছর ত্রিশালে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে তদারকি করেন ফারুক। তবে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করেন ভারতে পলাতক জেএমবি নেতা সোহেল মাহফুজ।