Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 29 October 2014

বিয়ের দিন সাইকেলে চড়েছি

অধুনা প্রতিবেদক | আপডেট: | প্রিন্ট সংস্করণ
নূর-এ-নাজিয়াঢাকার মেয়ে নূর-এ-নাজিয়া ছোটবেলাতেই সাইকেল চালানো শিখেছিলেন। শিখেছিলেন বড় বোন নূর-এ-ফাইজা’র উৎসাহে। ফাইজা নিজেও ১৯৯২ সালের দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী থাকাকালে সাইকেল চালিয়ে পড়তে আসতেন পুরান ঢাকা থেকে। নাজিয়া বোনের অনুপ্রেরণাতেই সাইকেল চালাতেন। তবে একটা সময় সাইকেল চালানো বন্ধ করে দেন। পড়াশোনা শেষ করে আবারও শুরু করেন সাইকেল চালানো। তবে এবার আর একা নয়, দলেবলে।
২০১১ সালে মোজাম্মেল হক সাইকেল চালানোর এক প্রচারণা শুরু করেন। পরিচিত এই বন্ধুর ডাকে সাড়া দেন নাজিয়া। দলেবলে সাইকেল চালানোয় আনন্দ পেয়ে যান নাজিয়া। দলের সদস্যসংখ্যা বাড়তে শুরু করলে সবাই মিলে একটা গ্রুপ গঠন করেন। নাম ঠিক হয় ‘বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপ’—যে গ্রুপের প্রথম নারী মডারেটর হিসেবে নাজিয়া যুক্ত হন দলটির আরও একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে। বর্তমানে বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৫০ হাজারের ওপর। নাজিয়ার সাইকেলপ্রীতি বোঝা যাবে একটা ছোট্ট ঘটনা থেকেই। ২০১৩ সালের মার্চের ১ তারিখ নাজিয়ার বিয়ের দিন ঠিক হয়। এর আগে হবু বরের সঙ্গে কথা বলে নাজিয়া ঠিক করেন গাড়ি-ঘোড়া নয়, তিনি বিয়ের বাহন করতে চান সাইকেল। বর আলী ইমরান ইমামও সেটা মেনে নেন একবাক্যে। কারণ, তাঁরও আছে সাইকেলপ্রীতি। এরপর তো বিয়ের দিন বরযাত্রীরা সাইকেল চালিয়ে উত্তরা থেকে বিয়ে করতে আসেন ধানমন্ডিতে। যে যাত্রায় সবার সামনে ছিলেন ইমরান। ঠিক ছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বরের বাড়ি যাত্রা করবেন বউ সাইকেল নিয়েই। বউ সাজার সময় তাই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন নাজিয়া। কিন্তু সেদিন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় বউয়ের আর সাইকেল চালিয়ে শ্বশুরবাড়ি আসা হয়নি। তবে বরের সঙ্গে সাইকেল নিয়ে ঘুরেছেন কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশের নানা সড়কে। নাজিয়া বলেন, ‘সাইকেল চালানোটা বিয়ের পর আরও বেশি এনজয় করছি। কারণ, আমার শ্বশুরবাড়িতে স্বামী ছাড়াও শ্বশুর-শাশুড়ি বা ছোট ভাইবোনেরা সবাই সাইকেল চালায়। মাঝেমধ্যেই আমি তাদের সঙ্গে উত্তরার আশপাশে সাইকেল চালাতে যাই। তবে আজকাল নিজের পেশাগত কারণেই সাইকেল কিছুটা কম চালানো হচ্ছে। তার পরও সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী বর্তমানে কর্মরত আছেন এসএমইসি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সুপারভিশন ও কনসালটেন্সি ফার্মের পদ্মা ব্রিজ প্রজেক্টের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে। শুধু সাইকেল চালানো নয়, নাজিয়া ছোটবেলা থেকেই নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। নাচ ও বিতর্কের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পেয়েছেন দুই ডজনের বেশি পুরস্কার। অনেকবার হয়েছেন বিতর্কের শ্রেষ্ঠ বক্তা। ভিকারুননিসা নূন কলেজে থাকতে নির্বাচিত হয়েছিলেন ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি। এ ছাড়া বুয়েটের ডিবেটিং ক্লাব ও ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বুয়েট থেকে পাস করে নাজিয়া এমবিএ ডিগ্রি নিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নাজিয়ার ইচ্ছা শুধু নারী নয়, ঢাকার সব কর্মজীবীই নিয়মিত সাইকেল চালাক। কারণ হিসেবে নাজিয়া বলেন, ‘সবাই সাইকেল চালালে আমাদের যানজটের কবলে পড়ে মূল্যবান সময় নষ্ট হবে না। তা ছাড়া শরীরও সুস্থ থাকবে। তবে সে সঙ্গে একটা সামাজিক আন্দোলন দরকার সাইকেল চালানোর পরিবেশের জন্য। আর সেটা তৈরি হতে পারে সাইকেলচালকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে।’