Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 31 October 2014

ভারতের জন্য যখন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ


সংবাদভাষ্য

ভারতের জন্য যখন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘লিঙ্গ বৈষম্য সূচক' থেকে বিভিন্ন দেশে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কতটা বেড়েছে তা বোঝা যায়৷ ভারত সব ক্ষেত্রে উন্নতি করছে – এমন একটা ধারণা থাকলেও, এ সূচক যা বলছে তাতে লজ্জা পাওয়াটাই স্বাভাবিক৷
এ কথাগুলোই উঠে এসেছে ডয়চে ভেলের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের সাংবাদিক মানসী গোপালকৃষ্ণন-সংবাদভাষ্যে৷ মানসীর মতে, ভারতের মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সংস্কৃতি অনেকটা একইরকম৷ এ সব দেশে নারীদের উপর অনেক ক্ষেত্রেই নানা রকম বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেয়া হয়৷ ছোটবেলা থেকেই ঘরের কাজে নারীদের দিতে হয় বেশ খানিকটা শ্রম৷ বাপেরবাড়ি থেকে তাঁরা এ ধরণের সংস্কৃতি লালন করেন এবং বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়েও সেটা অনুসরণ করতে হয় তাঁদের৷ ভারতে একজন আদর্শ নারীর তুলনা সবসময়েই করা হয় সীতা বা সতির সঙ্গে৷ ‘আদর্শ ভারতীয় নারী'-র লেবেলে সেই ধরনের নারীরই উদাহরণ দেয়া হয়, যাঁরা ঘরে থাকবেন, পরিবারের সম্মানের প্রতি নজর রাখবেন এবং সমাজ-সংস্কৃতি মেনে চলবেন৷
তবে এ দেশের নারীদের সৌভাগ্য বলতে হবে যে, দেশে কয়েকজন নারী নেত্রী হয়েছেন৷ ফলে অনেক এলাকায় রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে৷ এ জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বা ডাব্লিউইএফ-এর ‘লিঙ্গ বৈষম্য' বিষয়ক সূচকেও তার প্রতিফলন ঘটেছে৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতায় সারা বিশ্বে ভারতের অবস্থান ১৫৷ তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্রটা তুলনামূলকভাবে ভালো৷ এশিয়ার সব দেশের ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তাদের অবস্থান দশম৷ এটা হয়েছে মূলত দেশের দুই নারী নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার কারণে, যাঁরা গত কয়েক দশক ধরে দেশ পরিচালনা করছেন৷
Indien Zyklon Phailin নারীদের উপর অনেক ক্ষেত্রেই নানা রকম বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দেয়া হয়
তবে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ৬৮, ভারতের অবস্থান সেখানে ১১৪৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল পাকিস্তানের থেকে ভারতের অবস্থান সূচক-তালিকার ওপরে৷ পাকিস্তান, বিশ্বের নারী অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে যাদের অবস্থান সবচেয়ে ভয়াবহ৷ সূচকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪২৷ ডাব্লিউইএফ-এর প্রতিবেদন বলছে, ভারতের এই লিঙ্গ বৈষম্যের প্রধান কারণ হলো দিন দিন নারী ও পুরুষের জন্মহারের অনুপাতে পার্থক্য, অর্থাৎ প্রতি হাজার ছেলে জন্মের সময় নারী শিশু জন্ম নেয় মাত্র ৯১৪ জন৷ ২০১১ সালের পরিসংখ্যান তাই বলছে৷
মানসী বলছেন, নারীরা দ্বিগুণ শ্রম দেন আর তাঁদের কারণেই অর্থনীতির চাকা সচল থাকে৷ কিন্তু তাঁদের স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপরই কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না ভারতে৷ বিশ্বের যেসব দেশ উন্নতি করেছে সেখানেই দেখা গেছে নারীর স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর জোর দিলে পুরো সমাজের উন্নয়নের চিত্রটা পাল্টে যায়৷
শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবনাটা কিন্তু এই ধারণা থেকেই এসেছে৷ এ কারণেই তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ এই ব্যাংকের নারীরা নিজেদের সামান্য পুঁজি দিয়ে ছোট ছোট ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন৷ এ ধরনের উদ্যোগ নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে এবং নারীদের স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতে সাহায্য করে৷
মানসী গোপালকৃষ্ণন বাংলাদেশের আরো একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন৷ দেখিয়েছেন বাংলাদেশের নারীরা কীভাবে একে অপরের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সাহায্য করছেন৷ প্রত্যন্ত পল্লির নারীর কাছে বিভিন্ন সেবা পৌঁছে দিতে সদা তৎপর ‘তথ্যকল্যাণী'৷
Deutsche Welle DW Manasi Gopalakrishnan মানসী গোপালকৃষ্ণন, ডয়চে ভেলে হিন্দি বিভাগ
বাহন তাঁদের সাইকেল, আর সঙ্গে থাকে তথ্য-প্রযুক্তি, চিকিৎসা উপকরণ৷ মূলত তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন সেবা, পাশাপাশি গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বিভিন্ন সাধারণ চিকিৎসা সহায়তাও করেন তাঁরা৷ একই ধরনের একটি প্রকল্প রয়েছে ভারতে, যার নাম ‘আশা'৷ এঁদের কাজ হলো গর্ভবর্তী নারীদের নিজেদের যত্ন ও পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ দেয়া৷
এই সব উদ্যোগ নারীদের নিজেদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে বলে মনে করেন মানসী৷ অবশ্য এ সব উদ্যোগকে সফল করতে হলে প্রয়োজন নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন৷ মজার ব্যাপার হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় এমন বেশ কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে নারীই পরিবারের কর্ত্রী, অর্থাৎ নারী প্রধান পরিবার৷ ভারতের পূর্বাঞ্চল মেঘালয়ের খাসিয়া উপজাতিদের নারী প্রধান পরিবার এবং তাঁদের সমাজে নারী পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই৷ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ভারতের তথাকথিত আধুনিক সমাজব্যবস্থায় এ ধরনের ব্যবস্থা নেই৷
তাই মানসীর মতে, লিঙ্গ বৈষম্য সূচক ভারতের জন্য একটা অশনীসংকেত৷ অর্থাৎ ভারত যেখানে নিজেদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্যবাচ্য করছে, সেখানে এই সূচকই বলে দিচ্ছে যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক যাঁরা, সেই নারীদের উন্নয়ন ছাড়া প্রকৃত প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়৷