Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Friday 31 October 2014

এসিড সন্ত্রাসীরা বেকসুর!

ঘটনা এক :২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার আবদুল জব্বার নামে এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেন দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীকে এসিড ছুড়ে মেরেছে। এতে তার স্ত্রীর হাত, মুখ, গলা ও মাথায় গুরুতর জখম হয়।
নাহিদ তন্ময়
এসিড সন্ত্রাসীরা বেকসুর!ঘটনা এক :২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার আবদুল জব্বার নামে এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করেন দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে তার স্ত্রীকে এসিড ছুড়ে মেরেছে। এতে তার স্ত্রীর হাত, মুখ, গলা ও মাথায় গুরুতর জখম হয়। ২০০৮ সালে পুলিশ এজাহারভুক্ত তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর টানা ৫ বছর বিচারকাজ চলার পর ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল ওই মামলার রায় দেন বিচারক। কিন্তু পুলিশের তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও আদালত থেকে তারা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবাব চেয়ে পাঠানো হয়। জবাবে বারহাট্টা থানা পুলিশ জানায়, বাদী ও ভিকটিম থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলেও আদালতে সব ঘটনা অস্বীকার করেছেন। এ কারণেই আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। আর এর নেপথ্যে ছিল আসামিদের সঙ্গে বাদীপক্ষের আপস মীমাংসা।
ঘটনা দুই :২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন রৌশানা নামে এক গৃহবধূ। তিনি অভিযোগ করেন, যাত্রীবাহী বাসে যাওয়ার সময় বাসচালক অবৈধভাবে কনটেইনারে এসিড বহন করেন। কনটেইনার ছিদ্র হয়ে এসিডে বাদীর দুই পা এবং তার ছেলের দুই পা ঝলসে যায়। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ এজাহারভুক্ত আসামি বাসচালক আজাহার আলীকে গ্রেফতার এবং মামলাটির তদন্ত শুরু করে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া যায়। পরে তথ্য-প্রমাণসহ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তিন বছর পর আদালতের রায়ে আজাহার আলী বেকসুর খালাস পেয়ে যান। এ ঘটনায়ও পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের কাছে জবাব চেয়ে পাঠায়।
জবাবে পুলিশ জানায়, ওই মামলায় আদালতে বাদী ছাড়া আর কেউ সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি। এ ছাড়া বাদী রৌশানাও সঠিকভাবে আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করেননি।শুধু এ দুটি ঘটনাই নয়, এসিড সন্ত্রাসের ঘটনায় দায়ের করা অধিকাংশ মামলার পরিণতিই একই রকম। বাদী থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন। এ কারণে অধিকাংশ মামলা থেকেই রেহাই পেয়ে যায় এসিড সন্ত্রাসীরা।
এসিড সারভাইভর্স ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সেলিনা আহমেদ সমকালকে বলেন, এসিড অপরাধ দমন আইনটি কঠোর হলেও অনেক মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব, বাদী-সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে না আসা, সঠিক সাক্ষ্য না দেওয়া কিংবা তাদের খুঁজে না পাওয়া, বাদী ও আসামির মধ্যে আপস মীমাংসা ইত্যাদি কারণে অভিযুক্তরা খালাস পেয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত নারী সামাজিক, পারিবারিক চাপ এবং নিরাপত্তাহীনতায় সমঝোতায় যেতে বাধ্য হয়।
এসিড সারভাইভর্স ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০০২ থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক যুগে এসিড সন্ত্রাসের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ৯৩৯টি। অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি দাবি করে ৭৭২টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ, যা মোট মামলার ৪০ ভাগ। এ ছাড়া ৫২৭টি মামলায় ১ হাজার ৭৫৮ জন অভিযুক্ত খালাস পেয়েছে। আর আসামি সাজা পেয়েছে এমন মামলার সংখ্যা মাত্র ১৬৭টি। এসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৩০৫ জন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১১৬ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকি ১৭৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তবে ১২ বছরে এসিড সন্ত্রাসের মামলায় কোনো আসামিরই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী সমকালকে বলেন, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় সমাজে এ ধরনের জঘন্য অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় পুলিশ মামলার তথ্য-প্রমাণ সঠিকভাবে সংগ্রহ করে না। তা ছাড়া সন্ত্রাসীরা সমাজে প্রভাবশালী হওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে আক্রান্তের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। আক্রান্তের স্বজনরা অনেক সময় মামলা করতে দেরি করায় উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়।২০০৫ সালে নরসিংদী এলাকায় এসিড সন্ত্রাসের শিকার এক তরুণী বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি চেয়েছেন অপরাধীদের বিচার হোক। কিন্তু তার মা এবং পরিবারের সদস্যরা চান ঘটনাটির সমঝোতা করে ফেলতে। তিনি বলেন, প্রথম দিকে পরিবারের সবাই
অপরাধীর বিচার চেয়েছিল; কিন্তু সময় যত যাচ্ছে আস্তে আস্তে সবার মধ্যেই হতাশা তৈরি হচ্ছে। আর এ হতাশা থেকেই পরিবারের সদস্যরা সমঝোতার পথ বেছে নিচ্ছেন।সংশ্লিষ্টদের মতে, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা পুলিশের অদক্ষতা ও অসাধুতা। পুলিশের সঙ্গে অপরাধীদের যোগসাজশ থাকায় পুলিশ অভিযুক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে না। আবার আক্রান্ত ব্যক্তি যাদের সম্পর্কে অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের না ধরে অন্যদের ধরে।