Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Tuesday 5 November 2013

পিলখানা হত্যা মামলার রায়, ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড

বিডিআর ২১৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি বাহিনী। এরকম একটি বাহিনীকে ডাল-ভাত কর্মসূচির মতো অর্থনেতিক কর্মকান্ডে যুক্ত করা ঠিক হয়নি।"
বিচারক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে ২০০৯ সালে এক বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনায় আদালত আজ ১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। একই মামলায় আরও ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআর সদর দফতরের ভেতরে ঐ বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা সহ অন্তত ৭৪ জন নিহত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র দেড় মাসের মাথায় এই বিদ্রোহের ঘটনা সরকারকে এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল।
ঢাকায় আজ এই চাঞ্চল্যকর এবং নৃশংস হত্যাকান্ডের রায় ঘোষণার সময় আদালতের চারদিকে কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নেয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

"রাষ্ট্র তার কাজ করেছে। আমাদের এখন দেখতে হবে যে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পেল কিনা।"
নিহত সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহেরিন ফেরদৌসী
পুরোনো ঢাকার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন এক স্কুল ভবনের বিশাল একটি কক্ষে স্থাপিত বিশেষ আদালতে সকাল হতেই এই মামলায় অভিযুক্তদের আনা হতে থাকে।
মামলায় যে ৮৫০ জনকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় তাদের বেশিরভাগই বিলুপ্ত ঘোষিত বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআরের সদস্য ছিলেন। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতাও এই মামলার আসামী।
সকাল আটটা থেকে মামলার আসামীদের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আদালত কক্ষে আনা হতে থাকে। মামলার আসামী সাবেক বিডিআর সদস্যদের পায়ে ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে আদালত কক্ষে আনা হয়।
বিচারক এজলাসে এসে আসন গ্রহন করার আগেই দুই পক্ষের আইনজীবী, সাংবাদিক এবং হত্যাকান্ডের শিকার সেনা কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনে আদালত কক্ষ ভরে যায়।
ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান দুপুর সাড়ে বারোটায় রায় পড়া শুরু করেন।
১৫২ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষে শোরগোল শুরু হয়।
মৃত্যুদন্ড এবং যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া আসামীদের কেউ কেউ চিৎকার করে বলতে থাকেন আল্লাহর কাছেই তারা এর বিচার চাইবেন।
বিচারক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, “আমরা সবকিছু বিবেচনা করে এই রায় দিচ্ছি।”
বিদ্রোহের দিন পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকান্ডের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সুরতহাল রিপোর্ট দেখে আমার গা শিউরে উঠেছে। অনেক মৃতদেহকে তাদের সন্মান পর্যন্ত দেয়া হয়নি।”
তিনি রায়ে বিডিআর বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে আদালতের কিছু পর্যবেক্ষণও উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “ বিডিআর ২১৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি বাহিনী। এরকম একটি বাহিনীকে ডাল-ভাত কর্মসূচির মতো অর্থনেতিক কর্মকান্ডে যুক্ত করা ঠিক হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বিডিআর এর নেতৃত্ব এবং গোয়েন্দা কার্যক্রমেও ব্যর্থতা ছিল। যে কারণে ষড়যন্ত্র যেটা চলছিল সে সম্পর্ক তথ্য পেতে দুর্বলতা ছিল।”
রায় ঘোষণার পর আদালতে উপস্থিত নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
"বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় এই বাহিনীর ওপর যে কলংক তিলক পড়েছিল, আজকের রায়ে তা কিছুটা হলেও দূর হবে।"
বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ
নিহত সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল মুজিবুল হকে স্ত্রী মেহেরিন ফেরদৌসী বলেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট কিনা সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্র তার কাজ করেছে। আমাদের এখন দেখতে হবে যে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পেল কিনা।”
মামলায় বিবাদী পক্ষের একজন আইনজীবী বলেন, তারা ন্যায় বিচার পাননি। এর বিরুদ্ধে তারা উচ্চতর আদালতে আপীল করবেন।
২০০৮ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিদ্রোহে জড়িত এই বাহিনীর সদস্যদের বিচার এর আগেই শেষ হয়েছে।
এই বিদ্রোহের পর বিডিআর ভেঙ্গে দিয়ে এই বাহিনী পুর্নগঠন করা হয়। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নতুন নাম রাখা হয় বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজকের রায় শোনার পর আদালতে উপস্থিত বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় এই বাহিনীর ওপর যে কলংক তিলক পড়েছিল, আজকের রায়ে তা কিছুটা হলেও দূর হবে।