ধারণা করা হয়, টেক্সাস স্কুল বুক ডিপোজিটরি নামের এক বহুতল গুদামখানা থেকে প্রেসিডেন্টের ওপরে হামলা চালানো হয়েছিল। ঘটনার দিনই ওই গুদামখানার কর্মচারী লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে সন্দেহভাজন আততায়ী হিসেবে আটক করা হয়। অসওয়াল্ড হত্যার দায় স্বীকার করেনি, করতেও পারেননি। দুই দিন বাদে অর্থাত্ ২৪ নভেম্বরে জ্যাক রুবি নামের এক ব্যক্তি তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর থেকে কেনেডিকে হত্যায় লি হার্ভে অসওয়াল্ডের জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি আর্ল ওয়ারেনের নেতৃত্বে গঠিতে একটি সরকারি কমিশন জানায়, লি হার্ভে অসওয়াল্ড একা কেনেডির ওপরে গুলি চালিয়েছিলেন। কিন্তু এ নিয়ে ইতিহাসবিদেরা এখনো এ ব্যাপারে সন্দিহান। হত্যাকাণ্ডটি এখনো জনমনে সন্দিগ্ধ বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ নিয়ে মার্কিন গবেষণা সংস্থা গালাপ ২০০৩ সালে জনসাধারণের ওপরে এক জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, মাত্র ১৯ শতাংশ মার্কিন বিশ্বাস করেন যে কেনেডির হত্যার পেছনে কেবল এক ব্যক্তি জড়িত। এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি নাগরিক মনে করেন, কোনো মাফিয়া দল অথবা দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) কেনেডিকে হত্যা করেছে, কারণ তিনি তাদের স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিলেন।
বেশির ভাগ সন্দেহ জেগেছে অসওয়াল্ডকে ঘিরে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অসওয়াল্ড একা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষদের একজনকে বহুতল ভবনের ছয়তলা থেকে গুলি করে হত্যা করেছে—এটা খুব বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। এ নিয়ে অসওয়াল্ড মুখ খোলার আগেই তিনি নৈশ ক্লাবের মালিক জ্যাক রুবির গুলিতে মারা যান। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর জেসি ভেনচারা তাঁর সাম্প্রতিক বই ‘দে কিল্ড আওয়ার প্রেসিডেন্ট’-এ কেনেডি হত্যার পেছনে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, কেনেডিকে হয়তো এ কারণে হত্যা করা হয়েছিল যে, তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় যেতে চেয়েছিলেন এবং কিউবার সঙ্গে বে অব পিগসের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সেনা কর্মকর্তা-ব্যবসায়ী-আইনপ্রণেতাদের ভয়ংকর লেনদেনের চক্রকে ভাঙতে চেয়েছিলেন।
ভেনচারা তাঁর বইয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশজুড়ে কেনেডির যত শত্রু ছিল, তার চেয়ে নিজ সরকারের ভেতরে শত্রুর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, জন কেনেডি ছিলেন আধুনিক মার্কিন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ প্রেসিডেন্ট। কল্পনা করে দেখুন, কেনেডি বেঁচে থাকলে দুনিয়াটা কত ভিন্ন রকম হতো। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও স্নায়ু যুদ্ধ হতো না। বাজি ধরে বলতে পারে, আজ আমরা দারুণ এক পৃথিবী পেতাম।’