Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 24 October 2013

শুধু সেই সেদিনের মালী নেই...

শুধু সেই সেদিনের মালী নেই...



শুধু সেই সেদিনের মালী নেই...
মান্না দে
বলিউডের প্লেব্যাকের অন্যতম কিংবদন্তি মোহাম্মদ রফিকে নিজের চেয়ে প্রতিভাবান বলতেন মান্না দে। সেই মোহাম্মদ রফি-ই মৃত্যুর আগে একবার বলেছিলেন ‘সবাই শুনে আমার গান, আমি শুনি মান্না দা’র গান।’
বাংলাদেশের এ সময়ের শ্রোতাদের কাছে তার পরিচিতি ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা’ কিংবা ‘খুব জানতে ইচ্চে করে’ গানের গায়ক হিসেবে। কিন্তু বাংলা গানের বাইরে অন্য ভাষাতেই মান্না দে বেশি সফল, বেশি জনপ্রিয়। সাত দশকের স্বর্ণালী সঙ্গীত জীবনে মান্না দে গেয়েছেন নানা ভাষায়। বৈচিত্রের বিচারে অনেক সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা তাকে বলেন হিন্দি গানের জগতে সর্বকালের সেরা গায়ক।
মান্না দে’র পারিবারিক নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। ১৯১৯ সালের ১লা মে জন্ম নেয়া মান্না দে ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন ২৪ অক্টোবর। হিন্দি বাংলা মারাঠি গুজরাটি সহ বেশ কটি ভাষায় গান গেয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি। ১৯৫০ থেকে ৭০ এর দশকে বলিউডে প্লেব্যাকে ছিলেন মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমার, মুকেশের মতো সরব। সঙ্গীতে অবদানের জন্য পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদ্মশ্রী। সমসাময়িক কেউ না পেলেও একমাত্র শিল্পী হিসেবে ভূষিত হয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায়ও।

চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে মান্না দে পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। বড় ভাই প্রণব দে এক সময় বাংলার অন্যতম প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। দ্বিতীয় ভাই প্রকাশ চন্দ্র দে একজন চিকিৎসক ছিলেন। শুধু ছোট ভাই প্রভাষ চন্দ্র দে ছিলেন গান-বাজনার সঙ্গে জড়িত। তবে তাদের মধ্যে মান্না দে বেশি নামধাম করেছেন।
mannadey-ashabhosle
শৈশব জীবন তার কেটেছে কলকাতায়। স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকেই আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কাকা কৃষ্ণচন্দ্রই মান্না দে’র সঙ্গীতানুশীলনে প্রথম প্রেরণা। সঙ্গীত পরিবারে জন্ম বলেই পরিবেশ ও জন্মগত প্রতিভা মান্না দেকে সঙ্গীত অনুশীলনে এক সময় সফলতার পথে নিয়ে যায়। প্রথম দিকে তার বাবা ও কাকা ছেলেদের কোনো দিনই সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় যোগদান করার অনুমতি দিতেন না।

কিন্তু সমবয়সী অনেককেই বিচিত্রানুষ্ঠানে বিভিন্ন পদকে পুরস্কৃত হতে দেখে মান্না দে খানিকটা মনে মনে আঘাত পেতেন। পরবর্তী সময়ে কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগদান করে যখন পুরস্কার পেলেন তখন খুশিতে মন ভরে ওঠে। সেটা ছিল ১৯৩২-৩৩ সালের কথা। ১৯৩৭ সালে মান্না দে ইন্টার কলেজিয়েট সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত থেকেও পদক নিয়েছিলেন। সঙ্গীতে তার হাতে খড়ি কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে এবং ওস্তাদ দবীর খাঁ সাহেবের হাতে।

১৯৪২ সালে কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র সাথে মুম্বাইতে আসেন। তার সাথে এবং পরবর্তীতে শচীন দেব বর্মণের সহকারি হিসেবে কাজ করেন। ৪৩-এ হিন্দি এবং ৫২ সালে মারাঠী গান শুরু করেন।
হিন্দিতে মান্না দে র গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘কেতকী গুলাব জুহি’, কিশোর কুমারের সাথে দ্বৈত ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে  (শোলে), ‘এক চতুর নার (পদোসান)।
১৯৫৩ সালে কেরালার মেয়ে সুলোচনা কুমারনকে বিয়ে করেন মান্না দে। মুম্বাইতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় থাকার পর ব্যাঙ্গালোরে মেয়ের সাথে ছিলেন মান্না দে। গত বছর তার স্ত্রী মারা গেছেন।MANNA-DEY-3
২০০৫ সালে ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে তার আত্মজীবনী বের হয়। পরে ‘মেমরিজ কাম এলাইভ’ এবং ‘ইয়াদেন জি ওথি’ নামে ইংরেজি ও হিন্দিতে এটি অনুদিত হয়।
মান্নাদের সঙ্গীত জীবনের সম্পূর্ণ আর্কাইভ সংরক্ষণ করা আছে মান্না দে সঙ্গীত একাডেমীতে। পাশাপাশি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা সঙ্গীত ভবনেও মান্না দে’র সঙ্গীত সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। মান্না দে শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও সুপরিচিত।
মান্না দে’র গান নিয়ে একটা কথা চালু আছে যাদের যৌবনের জোয়ার এসেছে তাদের যৌবনের অপর নাম ‘মান্না দে’। সেই অর্ধশতক আগে গেয়েছিলেন ‘ জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নই, পাছে ভালোবেসে ফেলো তাই দূরে দূরে রই।’ এখনো সেই একই আবেশে মুগ্ধ করে রেখেছে সবাইকে।

তার ৯৪ তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোরে ছুটে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার কাছে মান্না দে বলেছিলেন ‘আমি একশ বছর বাঁচতে চাই।
বয়স যতই বাড়ুক, এখনও তারুণ্যের ছায়া মান্না দে’র চিন্তায় কথায়। গত বছর কলকাতার এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করছিলেন `টুইটার ফেসবুক এসব কী আমাকে বোঝাও?` আইপিএল কেমন চলছে এনিয়েও মাথা ঘামাতেন নিয়মিত। খেলা দেখতেন ফুটবলের বড় বড় লীগেরও।

শেষ বয়সে ঘরের মধ্যে ওয়াকার কানে চলাফেরা করতে হয়েছে তাকে।বিমানে চড়তে চিকিৎসকদের নিষেধ আছে। তাই ইচ্ছে থাকার পরেও ব্যাঙ্গালোর থেকে কলকাতায় আসতে পারতেন না ।
কফিহাউজ গানের সেই লাইনটাই আজীবন আওড়াতে হবে ‘একই সে বাগানে আজ এসেছে নতুন কুঁডি, শুধু সেই সেদিনের মালী নেই।`