Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 24 October 2013

একসঙ্গে দুই বাবা

একসঙ্গে দুই বাবা

নিউজিল্যান্ডের পতাকা হাতে ইশ সোধির বাবা রাজ সোধি। পাশের জন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বাবা মাহবুব হামিদ। কাল মিরপুরে ছেলের খেলা দেখতে আসা এই দুজনের গলায় গলায় ভাব দেখে কে বলবে তাঁদের ছেলেরা মাঠে একে অন্যের প্রতিপক্ষ!  প্রথম আলোবাংলাদেশের খেলা থাকলেই গ্যালারিতে তিনি নিয়মিত মুখ। তরুণ-যুবাদের মতোই গ্যালারিতে লাফ-ঝাঁপ করেন, উত্সাহ দেন দলকে। শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখে সব সময়ই লেগে থাকে হাসি। নিয়মিত মাঠে আসতে আসতে এখন তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটেরও পরিচিত মুখ। মাহবুব হামিদ, মুশফিকুর রহিমের বাবা। যথারীতি কালও ছিলেন শেরেবাংলায়, সঙ্গে মুশফিকের মা। তবে মধ্যাহ্নবিরতির পর থেকে নতুন একজনের সঙ্গে দেখা গেল মাহবুব হামিদকে। পরনে আকাশি-নীল শার্ট, চোখে চশমা, দেখতে এ দেশের দশজনের মতোই। তবে হাতে নিউজিল্যান্ডের পতাকা!

ফিফটির পর ইশ সোধি ব্যাট তুললেন নিজেদের ড্রেসিংরুমের দিকে, এরপর গ্যালারির ওই অংশের দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রবল বেগে পতাকা নাড়িয়ে যাচ্ছিলেন ভদ্রলোক। পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে মাহবুব হামিদ। উপলক্ষটা প্রতিপক্ষ একজনের মাইলফলক উদ্যাপন, তবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একটা জায়গায় তিনি এক কাতারেই। বাংলাদেশ অধিনায়কের বাবার সঙ্গে খেলা দেখছিলেন ইশ সোধির বাবা!

থাকেন অকল্যান্ডে, পেশায় মানসিক স্বাস্থ্য চিকিত্সক। শেষ মুহূর্তে জানতে পারায় আর পেশাগত ব্যস্ততার কারণে চট্টগ্রামে ছেলের অভিষেক টেস্ট দেখতে পারেননি রাজ সোধি। তবে দ্বিতীয় টেস্ট দেখতে ঠিকই চলে এসেছেন গত ১৯ অক্টোবর। শিক্ষক স্ত্রী সিমরাট সোধি আসতে পারেননি ব্যস্ততার কারণে, মায়ের সঙ্গে থাকার জন্য ছোট ভাইয়ের খেলা দেখতে আসতে পারেনি সিরাট সোধিও। তবে একা এসেও ছেলের খেলায় মন ভরে গেছে বাবার। বল হাতে ইশ নিয়েছেন ৩ উইকেট। এরপর কাল ১০ নম্বরে নেমে করলেন দারুণ এক অপরাজিত হাফ সেঞ্চুরি। বাবার গর্বিত উচ্চারণ, ‘ভীষণ ভালো লাগছে। এমনিতে ইশ খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও ভালো লাগত। ছেলেকে টেস্ট খেলতে দেখাই অনেক বড় গর্বের। ও ভালো করায় আনন্দটা আরও অনেক বেড়ে গেছে। দল জিতলে আরও ভালো লাগবে।’
ছেলে মাঠে খেলছে নিউজিল্যান্ডের হয়ে, বাবা জয় কামনা করছেন গ্যালারি থেকে। কিন্তু শেকড় তাঁদের ভারতের পাঞ্জাবে। ইশ বা ইন্দরবীর সিং সোধির জন্মও লুধিয়ানায়। ১৯৯৬ সালে, ইশের চার বছর বয়সে সোধি পরিবার চলে যায় অকল্যান্ডে। এমনিতে চিকিত্সক দম্পতির কেউই খেলাপাগল নন, পরিবারে কোনো খেলার ঐতিহ্যও নেই। তবে ইশ ছোট থেকেই ক্রিকেটপাগল। ছেলের ছেলেবেলাটা পুরোই মনে পড়ে বাবার, ‘ক্রিকেট বল হাতে পেলে পুরো দুনিয়া ভুলে যেত ও। আর যেদিন থেকে স্পিন বোলিং শুরু করল, ক্রিকেটে যেন আরও বেশি মজা পেয়ে গেল। যত্রতত্র, যখন-তখন শুধু বোলিং করে যেত।’ বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু খেলার, জন্মগত প্রতিভার প্রমাণ মেলে স্কুলে গিয়ে। স্কুল ক্রিকেটের এক ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়ার পর স্কুলের কোচ রাজ সোধির কাছে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনার ছেলে স্পেশাল এক প্রতিভা।’ ব্যস, সেদিনের পর ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছেন ক্রিকেটের জন্য। আজ এই ২০ বছর বয়সেই ছেলেকে এই অবস্থানে দেখে গর্বের শেষ নেই রাজের। তবে প্রত্যাশার ভার চাপিয়ে দিতে চান না ছেলের ওপর, ‘ওকে শেন ওয়ার্ন বা ভেট্টোরি হতে হবে না। চাই ও মনের আনন্দে খেলে যাক।’
রাজের সঙ্গে মাহবুব হামিদের পরিচয় গ্যালারিতেই। নিউজিল্যান্ডের পতাকা হাতে একজনকে বসে থাকতে দেখে উত্সাহী হয়ে জানতে পারলেন পরিচয়। সখ্য হয়ে গেছে দ্রুতই। ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলার দাওয়াতও পেয়ে গেছেন বাংলাদেশ অধিনায়কের বাবা, ‘চমত্কার একজন মানুষ উনি। অনেক কথা হয়েছে, ভালোই সময় কেটেছে একসঙ্গে। আগামী বিশ্বকাপ দেখতে নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার দাওয়াতও দিয়েছেন আমাকে। বলেছেন, ওনার বাড়িতেই থাকতে হবে...হা হা হা হা...।’
-আরিফুল ইসলাম | আপডেট: ০১:১৯, অক্টোবর ২৪, ২০১৩ | @ Prothom-alo প্রিন্ট সংস্করণ