Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 24 October 2013

ভূ-স্বর্গে ভ্রমণ


ভূ-স্বর্গে ভ্রমণ



ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞানে পড়েছিলাম “কাশ্মির" কে পৃথিবীর ভূ-স্বর্গ বলা হয়। তখন সেটা পড়ার জন্যই পড়তাম। সৌন্দর্যের অনুভূতিগুলো হয়ত তখনও ঠিকভাবে জন্মায়নি। প্রকৃতিপ্রেম যখন তৈরি হয় তখনই বলা চলে যে কাশ্মির ভ্রমণটা মনে মনে কল্পনা করে রেখেছিলাম। কাশ্মির নামটা শুনলেই কেমন যেন যুদ্ধ যুদ্ধ অনুভূতি তৈরি হয় সবার মধ্যে। বাস্তবিক অর্থে কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আমরা ছয় বন্ধু মিলে প্ল্যান করলাম ভূ-স্বর্গে (কাশ্মির) ভ্রমণ করার। যথারীতি অনলাইনে ভিসা আবেদন করলাম। ভাগ্যবশত সবাই ৩ মাসের ভিসা পেয়েও গেলাম।
দিনক্ষণ ঠিক করে চড়ে বসলাম কলকাতার বাসে। কলকাতা রাত যাপন করে পরদিন ভোর ৬:৪৫ মিনিটে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দর (দম দম বিমানবন্দর) থেকে প্লেনে চেপে রওনা দিলাম জম্মু কাশ্মিরের রাজধানী শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। কলকতা থেকে সরাসরি শ্রীনগর বিমান নেই। সেটা দিল্লিতে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতি দিয়ে অন্য প্লেনে করে ১:৩০ মিনিটে শ্রীনগর বিমানবন্দর এসে পৌঁছলাম। তাপমাত্রা নিয়ে আগেই একটা শংকা ছিল মনের মধ্যে। প্লেন থেকে নামার সাথে সাথে তার সত্যতা মিলল। সম্ভবত ১০ ডিগ্রি  হতে পারে।
kashmir3কাশ্মিরের সৌন্দর্য প্লেন থেকে উপভোগ করতে লাগলাম। প্লেন যখন শ্রীনগরের আকাশে, ওপর থেকে সে কি দৃশ্য! লেখে বোঝানো হয়তো কারো পক্ষে সম্ভব না। বিমানবন্দরে নেমে থাকার ব্যবস্থা করলাম। পথে আমরা পেয়ে গেলাম একজনকে। শওকত ভাই পুরোদস্তর মুসলমান, স্মিত হাসি দিয়ে সব কিছু বুঝিয়ে বললাম। তাতে রাজি হয়ে গেল । ওনার জিপে করে রওনা দিলাম ডাললেক নামক জায়গাতে। পথে যেতে যেতে তিনি বর্ণনা করলেন হাউজ কোট-এর কথা, যেখানে কিনা আমরা থাকবো। ডাললেকে গিয়ে দেখি সতিই অবাক করা সব, নৌকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা। বিশাল লেকে এসবই কাঠের তৈরি নৌকা জানান দেয় কাশ্মিরের এর সৌন্দর্য। হাউস বোটে যেতে হলে নৌকায় চেপে যেতে হয়। নৌকাগুলোর স্থানীয় নাম শিকারা।
kashmir32প্রথম দিনই আমরা গেলাম মোগল গার্ডেন এবং হয়রত বাল মসজিদ।এই মসজিদের বিশেষত্ব হল এখানে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর চুল সংরক্ষিত আছে। বছরের বিশেষ ১০ দিন এটা সাধারণ মানুষের দেখার সৌভাগ্য হয়।
দ্বিতীয় দিন ভোরে আমরা রওনা দিলাম কাশ্মীরের বিশেষ জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম পেহেলগাম।
ডাললেক থেকে ১২০ কি.মি দুরত্বে অবস্থিত, যেতে ২ ঘণ্টা সময় লাগলো। রাস্তার দুইপাশের সৌন্দর্য্যগুলো চোখে লেগে থাকার মত। মাইলের পর মাইল আপেল বাগান। ক্রিকেট ব্যাটের সারি সারি কাঠ গাছ। রাস্তার দুই পাশে ক্যাসর (জাফরান) বাগান দেখতে আমাদের দেশের সরিষা খেতের মত অনেকটা। পেহেলগাম দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে মিনি সুইজারল্যান্ড পৌঁছানো আমাদের জন্য ছিল দারুণ রোমাঞ্চকর। ঘোড়ায় চড়ে বসলে বরফের পাহাড় বেয়ে আপনাকে চূড়ায় নিয়ে যাবে কোন সাহায্যকারী ছাড়াই। আপনাকে শুধু ঘোড়ার লাগামটা ঠিকভাবে শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। ‘যাব তাক হে জান’ এর শুটিং স্পটটাও ছিল দেখার মত।
kashmir-220তৃতীয় দিন গেলাম গুলমার্গএর উদ্দেশ্যে। আগে থেকেই জানা ছিল তাপমাত্রা মাইনাস হতে পারে। তাই প্রস্তুতিটাও ছিল সেই রকমভাবে। বেজমেন্ট থেকে স্যু জেকেট ভাড়া নিয়ে পৌঁছলাম নির্দিষ্ট স্পটে। বলে রাখি যে ডাললেক থেকে গুলমার্গএর দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার এবং আমাদের পৌঁছতে সময় লাগলো দেড় ঘণ্টা। সেখানে অনেকের সাথে স্কেটিং এবং স্লেজিং অনেকটা রোমান্সকর এবং আনন্দদায়ক ছিল। গুলমার্গএর বিশেষত্ব হচ্ছে ক্যাবলকার যেটা গেন্ডোলা নামে পরিচিত। টিকেট কেটে বরফঘেরা পাহাড় বেয়ে ১১০০০ ফিট ওপরে গেন্ডোলা চড়া  অনেকটা জীবন হাতে নিয়ে চড়ারই সামিল।
৪র্থ দিন ভোরে সোনামার্গ-এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। মিশন কাশ্মির সিনেমাসহ অনেক সিনেমায় শুটিং স্পট সত্যিই না দেখলে বিশ্বাস করা অনেকটা কঠিন কাশ্মিরের অপরূপ সৌন্দর্য।
kashmir-120দু’চোখ দিয়ে কাশ্মিরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গেলে চোখ ব্যথা হয়ে যাবে তবুও সৌন্দর্যদর্শন শেষ হবে না।
কীভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সারাসরি কলকাতা। কলকাতা থেকে আপনি ট্রেনে করে অথবা প্লেন যোগে যেতে পারেন। প্লেনে গেলে আপনার খরচটা একটু বেশি হলেও সময় অনেক কম লাগে। কলকাতা থেকে প্লেন যোগে দিল্লি  হয়ে শ্রীনগর যেতে ৬ ঘণ্টা লাগবে ।
থাকার জন্য শ্রীনগর ডাললেকে অনেক সুন্দর সুন্দর হোটেল আছে, তাছাড়া চাইলে আপনি হাউসবোটেও থাকতে পারেন। সেগুলো আগে থেকে বুকিং-এর প্রয়োজন নাই।
লেখক:- ইঞ্জিনিয়ার কাজী সাখাওয়াত হোসেন