Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Wednesday 23 October 2013

ছবির নাম ‘বারো বছর ধরে ক্রীতদাস’

ছবির নাম ‘বারো বছর ধরে ক্রীতদাস’

একটি অসাধারণ ছবি, যে ছবিতে ব্রিটিশ অভিনেতা চুইতেল এজিওফর’এর অভিনয় নাকি ছবিটিকে বেস্ট ফিল্ম ছাড়া বেস্ট অভিনেতার অস্কারও এনে দিতে পারে৷ উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি অ্যামেরিকায় দাসপ্রথা হলো ছবির উপজীব্য৷
ছবির একটি দৃশ্য চুইতেল এজিওফর (ডানে)
‘‘টুয়েল্ভ ইয়ার্স আ স্লেভ'' নামক ছবিটির চিত্রপরিচালক ব্রিটিশ স্টিভ ম্যাককুইন৷ সলোমন নর্থাপ নামধারী এক কৃষ্ণাঙ্গের বাস্তব জীবনকাহিনীর উপর ভিত্তি করে ছবি৷ নর্থাপের জন্ম নিউ ইয়র্কে৷ ভালো বেহালাবাদক৷ ১৮৪১ সালে তাঁকে কাজের লোভ দেখিয়ে ওয়াশিংটনে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কাজের বদলে তাঁর ‘‘চাকুরিদাতারা'' তাঁকে ওষুধ খাইয়ে অজ্ঞান করে বেচে দেয় এক দাসব্যবসায়ীর কাছে৷
এর আগে নর্থাপ নিউ ইয়র্ক রাজ্যের সারাটোগা'য় একটা সুন্দর জীবন যাপন করছিলেন স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে৷ অপহরণের পর যখন চোখ খুললেন, তখন তাঁর হাতে-পায়ে বেড়ি, পকেটের কাগজপত্র, মানিব্যাগ, সবই উধাও৷ যেন তাঁর পরিচিতিই কেড়ে নেওয়া হয়েছে, নামটা পর্যন্ত৷ শীঘ্রই তাঁকে লুইজিয়ানায় পাঠানো হচ্ছে৷ নর্থাপ অন্যান্য ক্রীতদাসদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে - বিক্রির জন্য৷ বিক্রেতা এই কালো মানুষগুলোকে গরু-ছাগলের মতো খুঁচিয়ে দেখাচ্ছে তার হবু খদ্দেরদের৷ অনেক হবু ক্রীতদাসের পরণে বস্ত্র পর্যন্ত নেই৷ মায়ের কাছ থেকে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের কেড়ে নিয়ে বিক্রি করতে দ্বিধা করছে না সেই দাসব্যবসায়ী৷
কথা বলছেন পরিচালক স্টিভ ম্যাককুইন (বামে)
নর্থাপের প্রথম মালিক ছিলেন উইলিয়াম ফোর্ড, মানুষ হিসেবে খুব খারাপ নন৷ কিন্তু ফোর্ডের ওভারসিয়ারই দাসেদের, এবং নর্থাপের বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়৷ এমনকি নর্থাপকে একটি গাছ থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখতেও দ্বিধা করে না - ছবির একটি মর্মান্তিক দৃশ্য৷ নর্থাপ মৃত্যুর মুখে, তবুও পায়ের আঙুল দিয়ে মাটি ছুঁতে পারছেন, সেটাই তাঁর একমাত্র আশা৷ নর্থাপ মৃত্যুর মুখে, অথচ তার কাছেই বাচ্চারা খেলছে, অন্য ক্রীতদাসরা কর্মরত, মালিকের স্ত্রী বারান্দা থেকে ঝুঁকে মজা দেখছেন৷
নর্থাপের পরের মালিক এডউইন এপ্স আরো বিভীষণ৷ ক্রীতদাসদের প্রয়োজনে ১৫০ ঘা বেত মারাটাও তার কাছে কিছুই নয় - অথচ মুখে বাইবেলের বুলি আওড়াচ্ছে৷ এপ্স আবার প্যাটসি নামের এক কিশোর ক্রীতদাসের প্রতি আকৃষ্ট - যার ফলে প্যাটসি'কে এপ্স'এর স্ত্রীর রোষও সহ্য করতে হচ্ছে৷ এ'সব কিছুর মাঝেই চলেছে নর্থাপের বেঁচে থাকার, শুধু বেঁচে থাকার অসম, অসীম সাহসী লড়াই, যে ভূমিকায় চুইতেল এজিওফর সম্ভবত তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন৷ এবং সেটা করতে পারার আগে তিনি নর্থাপের স্মৃতিকথা পড়েছেন, বিভিন্ন প্ল্যান্টেশনে গেছেন, এমনকি বেহালা বাজানো শিখেছেন৷
কিন্তু লুইজিয়ানার গ্রীষ্মে এ'ধরনের একটি খামারে ক্রীতদাসের কাজ? গত মাসে টরোন্টো ফিল্ম ফেস্টিভালে এজিওফর একটি সাক্ষাৎকারে বলেন: ‘‘ভাবো সেখানে তোমার প্রথম দিন৷ ১০৮ ডিগ্রি গরম৷ তার মধ্যে কার্পাস তুলতে হচ্ছে৷ এটা লোকে করে কি করে? এ' যেন বিকার৷''
উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি অ্যামেরিকায়, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অ্যামেরিকায়, কালো মানুষেরা ঠিক সে'ভাবেই কাজ করত৷
এসি / জেডএইচ (এপি)

DW.DE