Boxed Style

আইফোন জিতে ক্লিক করুন

Thursday 24 October 2013

আমাকে আমার মতো খেলতে দিন: তামিম

আমাকে আমার মতো খেলতে দিন: তামিম

তামিম ইকবাল: ফাইল ছবিসর্বশেষ সেঞ্চুরিটা তিন বছর চার মাস আগে। শূন্যে লাফিয়ে হাত ছুড়ে, হেলমেট খুলে ব্যাট উঁচিয়ে উদযাপন করার জন্য তাঁর অপেক্ষাটা দীর্ঘায়িতই হচ্ছে কেবল। গত ২৩ ইনিংসে তিন অঙ্কের সেই জাদুকরী ইনিংস আসেনি। মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসেই আসতে পারত। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতেই আউট হয়েছেন অহেতুক একটা শট খেলতে গিয়ে। আগের ইনিংসের ভুল শোধরাতে গিয়েই যেন আজ ব্যাটিং করছিলেন স্বভাববিরুদ্ধ। নিজেকে খোলসের মধ্যে বন্দী করে ফেলেছিলেন। লাগাম পরিয়েছিলেন মেরে খেলার ইচ্ছাটাকে। কিন্তু আবারও ক্ষণিক অধৈর্যের খেসারত দিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন তামিম ইকবাল।
প্রাপ্য সেঞ্চুরিটা না-পাওয়ার যন্ত্রণার চেয়ে বড় কিছু আর কী হতে পারে! তামিম নিজেও হয়তো ভেতরে ভেতরে পুড়ছিলেন। এ নিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠতে প্রতিবার একটু খেপেই যেন যাচ্ছিলেন। ২১৮ বল খেলে ৭০ রান। স্ট্রাইক রেট ৩২.১১! উইকেটে এ যেন ছিল অন্য এক তামিম। তাঁর ৫০-এর বেশি ইনিংসগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেটের ইনিংস। এর চেয়ে বেশি বল তামিম আর একটা ইনিংসেই খেলেছেন। কিংসটাউনে সেবার ২৪৩ বলে করেছিলেন ১২৮। আজ মাত্র চারটি চার মেরেছেন। ৭০ কিংবা তার বেশি রানের কোনো ইনিংসে এত কম চারও তামিম আগে মারেননি।
উইকেটে যে পরিমাণ ধৈর্য দেখালেন, সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটা উঠতে কিন্তু তা আর ধরে রাখতে পারেননি। তামিম বললেন, ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য নিয়ে নয়, তিনি খেলেছেন দলের চাওয়া অনুযায়ী, ‘আজকের ইনিংসটা নিয়ে আমি আগে কোনো লক্ষ্য স্থির করিনি। এই ইনিংসটা ছিল দলের জন্য। আমার নিজের কোনো লক্ষ্য ছিল না। আমি ১০০ করব, ৮০ করব এমন কিছু না। কিছুটা হতাশ। ১০০ করা উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি।’
সেঞ্চুরির জন্য কেন এত দীর্ঘ অপেক্ষা—এই প্রশ্ন উঠতেই তামিম বললেন, প্রশ্নটাই তিনি আর শুনতে চান না, ‘এটা নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে, এর কারণে কিন্তু আমারই ক্ষতি হচ্ছে। এটা আপনাদেরও একটু বোঝা উচিত। এতবার একটা প্রশ্ন করা উচিত না। সবকিছুর একটা লিমিট আছে। প্রত্যেক দিন দেখা হলেই এক প্রশ্ন—সেঞ্চুরি হচ্ছে না। সেঞ্চুরি কে না করতে চায়। আপনাদের বুঝতে হবে, ক্রিকেট হচ্ছে মেন্টাল গেম। এটা আমার ওপর এক ধরনের বাড়তি চাপ তৈরি করছে। আমি অনুরোধ করব এ ধরনের প্রশ্ন আর না করার।’
নিজে সেঞ্চুরি পাননি। তবে দলের কাজটা করতে পেরেছেন, এই তৃপ্তি কিন্তু ঠিকই আছে তাঁর, ‘যদি পুরোটা শেষ করতে পারতাম, তা হলে ভাবতাম নিজের দায়িত্ব পুরো পালন করেছি। তবে আমি মনে করি দলের জন্য আমি মোটামুটি ভালোই কাজ করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল অন্তত চা-বিরতি পর্যন্ত উইকেট না হারানো। আপনি যদি আমার ইনিংসগুলা চিন্তা করে দেখেন, আমি যখন ৪০-৪৫ রানে ব্যাট করি, স্পিনার থাকলে আমি একটা মেরে খেলার সুযোগ নিই। যখন আমি ৮০-৯০ এ থাকি, একটু হলেও চান্স নিই মাইলফলকটা ছুঁয়ে ফেলার জন্য। আজকে আমি এক-এক রান নিয়ে খেলেছি। আজকের এই ইনিংসটায় কোনো ব্যক্তিগত মাইলস্টোন আমার কোনো লক্ষ্য ছিল না। দলের আমার প্রয়োজন ছিল। আমি সেভাবেই খেলেছি।’
পরিস্থিতির দাবি মেনে নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খোলসবন্দী করে ফেলাও তো অনেক কঠিন একটা কাজ। তামিমও মানলেন, ‘কঠিন তো অবশ্যই। আমি স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করি। একটা সময় অফস্পিনাররা বল করছিল। স্পিনারদের বিপক্ষে আমার খুব প্রিয় একটা শট আছে, সেটাও খেলিনি। প্রত্যেকটা ইনিংসেই আপনি কোনো না কোনো কিছু শিখতে পারবেন। টেস্ট ক্রিকেটে এমন এমন পরিস্থিতি আসে যখন আপনাকে পরিস্থিতির দাবি মেনে খেলতে হয়। আপনি আপনার স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারবেন না। আজকে সে রকম পরিস্থিতিই ছিল। এটাও আমার জন্য শেখার।’
তামিম সেটা সত্যিই পেরেছেন। সাংবাদিকেরা সেটার বাহবাও দিতে চাইছিলেন। কিন্তু তামিম হয়তো পুরোনো অভিমানের কারণে ভুলই বুঝে বসলেন, খানিকটা উষ্মা নিয়েই বললেন, ‘আমি যদি মেরে খেলি, সবাই বলে আমি মেরে খেলছি। আমি ধীরে ব্যাটিং করলে সবাই বলে আমি ধীরে ব্যাটিং করি। আমি আসলে করবটা কী, এটা আপনারা আমাকে বলে দিন। এ জিনিসটা এত অতিরিক্ত হচ্ছে! আমি স্বাভাবিক খেললে বলে, আমি মেরে খেলছি। আস্তে খেললে বলে আস্তে খেলছি। আমাকে আমার মতো খেলতে দিন প্লিজ। লেট মি প্লে মাই গেম।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে উঠে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘আমি বসে বসে চিন্তা করছিলাম আল্লাহর রহমত শেবাগ বাংলাদেশে জন্ম নেয় নাই। তা হলে ও ক্রিকেট খেলা ভুলে যেত। মিডিয়াও ক্রিকেটের অংশ। কিন্তু একটা জিনিস নিয়ে বারবার বলা এটাকে ক্রিকেটের অংশ বলে আমি মনে করি না।’