Monday, 6 January 2014

৩৪টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি


লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনে ৮৯টি ভোটকেন্দ্রের ২৭টিতে কোনো ভোট পড়েনি। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে বিষয়টি জানা যায়।
এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবির খবরে বলা হয়, সাতক্ষীরা-২ আসনে দুটি, সিলেট-২ আসনে দুটি, ফেনী-২ আসনে দুটি ও রাজশাহী-৬ আসনের একটি কেন্দ্র্রে কোনো ভোট পড়েনি।
সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের সাতটি, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ছয়টি, কুলাঘাট ইউনিয়নের ছয়টি, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ছয়টি এবং হারাটি ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোনো ভোট পড়েনি। এসব ইউনিয়ন বিএনপি ও জামায়াত-শিবির প্রভাবিত এলাকা হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে বড়বাড়ী ইউনিয়ন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর নিজের ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের আমবাড়ীতে তাঁর গ্রামের বাড়ি।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ২৭টি কেন্দ্রে ভোট না পড়ায় বা কেউ ভোট দিতে না আসায় বিএনপির নির্বাচন বর্জন করার দাবির পক্ষে জনমত প্রতিফলিত হয়েছে।
অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের অব্যাহত হুমকির কারণে ওই কেন্দ্রগুলোতে ভোট পড়েনি। তিনি দাবি করেন, হুমকি-ধমকি ও মারধরের মতো কোনো ঘটনার আশঙ্কা না থাকলে, এসব কেন্দ্রেও বিপুল ভোট পড়ত ।
এদিকে আজ ভোট দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমজাদ হোসেন এবং মোগলহাট ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা ওছমান গণি বিরোধীদের হাতে মারধরের শিকার হন। তাঁদের মধ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ওছমান গণিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর নিরাপত্তার অভাবে পঞ্চগ্রামের আমজাদ হোসেন তাঁর বাড়িতেই চিকিত্সা নিচ্ছেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া বড়বাড়ী ইউনিয়নের আমবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পোলিং কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, হারাটী দাখিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক, পুলিশের সদস্য নুরুল হক বিরোধীদের হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন। গোকুন্ডা ইউনিয়নের কুর্শামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটের আগের দিন রাতে সন্ত্রাসীদের হামলায় এসআই আকরামুল হক ও পুলিশের পরিদর্শক সিফাত উল্লাহ আহত হন। কয়েকটি কেন্দ্রের কিছু ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) নাজমুল হুদা বলেন, ‘সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ২৭টি কেন্দ্রে কোনো ভোট না পড়ার কথা আমিও শুনেছি।’  তিনি বলেন, তিন-চারজন পুলিশ কর্মকর্তা ও দুজন নির্বাচনী কর্মকর্তা ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত আর কেউ হামলা বা আঘাতের শিকার হননি বলে প্রাথমিকভাবে  জানা গেছে।
লালমনিরহাট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে আবু সালেহ মো. আবু সাঈদ, জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং জাসদের মো. খোরশেদ আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে জাতীয় পার্টির গোলাম মোহাম্মদ কাদের তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রত্যাহারের আবেদনটি যথাযথভাবে করা হয়নি দাবি করেছেন। এ জন্য তাঁর প্রার্থিতা বহাল রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন নিয়ে উত্সাহ নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের!

দশম জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উত্সাহ নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও। যে কারণে সারা দেশে  হতাহত ও ভাঙচুরের এত ঘটনা ঘটলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো নির্দেশনা ছিল না আজ নির্বাচনের দিন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যেকোনো জাতীয় নির্বাচনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়। কিন্তু আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বা সচিবসহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ে আসেননি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রায় দুই সপ্তাহ আগে নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা ছেড়ে পাবনা গেছেন, আর ফেরেননি। বলা যায়, আজ মন্ত্রণালয়ও সরকারি ছুটি উপলক্ষে বন্ধ ছিল। স্বরষ্ট্রসচিব সি কিউ মুশতাক আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তাদের আজও দেখা যায়নি।
শুধু এ নির্বাচন উপলক্ষে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করার জন্য একটি সেল খোলা হয় মন্ত্রণালয়ে। যেখানে ওই সেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা অলস দিন কাটিয়েছেন।
তদারকি সেলে আজ সারা দিন অবস্থানের পর দেখা গেছে, কোনো জেলা থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির বড় কোনো ধরনের কোনো সংবাদ আসেনি। টেলিফোন বা ফ্যাক্সও আসেনি। শুধু নিয়ম মানার দায়িত্ব পালন করছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুলিশ, এসবি, র্যাব, বিজিবি, নেভির কর্মকর্তারা। টেলিভিশনে নির্বাচনের সংবাদ দেখেই সময় কাটিয়েছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশ করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন মাথাব্যথা নেই। একদলীয় বলেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা থাকা জরুরি মনে করেননি। শুধু দু-একজন, যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরাই উপস্থিত ছিলেন।

দুই আসনে জয়ী জাসদ

 
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও পঞ্চগড়-১ আসনে আসনে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) দুই প্রার্থী।
বগুড়া-৪ আসনে মশাল প্রতীকে ২২ হাজার ২০৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম। আর পঞ্চগড়-১ আসনে জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হক প্রধান ৪৬ হাজার ১৫৫ ভোট পেয়ে জিতেছেন।
বেসরকারিভাবে পাওয়া ফলাফলে জানা যায়, বগুড়া-৪ আসনে জাসদের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম (মশাল) পেয়েছেন ২২ হাজার ২০৩ ভোট। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মো. নুরুল আমিন বাচ্চু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ১৩ হাজার ৪৮৯ ভোট।
আজ রাত নয়টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুছ আলী বেসরকারিভাবে এ কে এম রেজাউল করিমকে জয়ী ঘোষণা করেন।
এদিকে পঞ্চগড়-১ আসনে জাসদের প্রার্থী মো. নাজমুল হক প্রধান (মশাল) পেয়েছেন ৪৬ হাজার ১৫৫ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির আবু সালেক লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯০৮ ভোট। আট হাজার ২৪৭ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হন মো. নাজমুল হক প্রধান।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

AD BANNAR