Wednesday, 25 December 2013

কৌশলী সরকার, পেরে উঠছে না বিএনপি

 
সরকারের একের পর এক রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে পেরে উঠছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপের বিষয়ে সরকারি দলের সাম্প্রতিক বক্তব্য-প্রচারণাকে সর্বশেষ রাজনৈতিক কৌশল বা ফাঁদ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপি অবরোধ-সহিংসতা বন্ধ এবং জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে তিনি দশম জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
সরকারি দলের একাধিক নেতা জানান, দর-কষাকষির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বেলুন আকাশে উড়িয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে একটা ধোঁয়াশা তৈরি করে দশম সংসদ নির্বাচন শেষ করার পথ সুগম করতে যাচ্ছে সরকার, যাতে সবাই ধরে নেয় এ নির্বাচন হবেই। এর ফলে বিরোধী দল হতাশ হয়ে দ্রুততম সময়ে একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংলাপের প্রতি মনোযোগী হতে পারে বলেও সরকারের নীতি-নির্ধারকেরা মনে করছেন।
কূটনৈতিক সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এই আশ্বাসকে একটি দেশ ইতিমধ্যে সমর্থন দিয়েছে। কয়েকজন কূটনীতিক আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের বোঝানো হয়েছে যে নিয়ম রক্ষার জন্য নির্বাচন করতেই হবে। পরবর্তী সময়ে সমঝোতা ও সংলাপের মাধ্যমে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
সরকারদলীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দেওয়ার আগে তা প্রথমে নেতাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছেড়ে দেন। এর আগের দিন ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সমঝোতায় এলেও দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এখন আলোচনা হতে পারে একাদশ সংসদ নিয়ে।
অবশ্য ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ওই দিনই প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে যে সংলাপ চলছে, তা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য। এটা নিয়ে সরকার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে ওবায়দুল কাদের প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সরকারের অবস্থান পরিষ্কার, এখানে বিভ্রান্তির কিছু নেই। হাইকোর্টের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামায়াত নিবন্ধিত দল নয়। তাকে সঙ্গে রাখার সুযোগ বিএনপির নেই।
সরকারদলীয় একাধিক সূত্র বলছে, সরকারের এখনকার কৌশল হচ্ছে জামায়াতকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করা। নির্বাচনের আগেই দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় জামায়াতকে শক্তিহীন ও দমন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। এরপর ৫ জানুয়ারি নির্বাচন শেষে আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে নতুন উদ্যমে মাঠে নামবে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেন, মাত্র ৩ শতাংশেরও কম ভোটার থাকা একটি দলের কাছে জাতি জিম্মি থাকতে পারে না। নির্বাচনের পর সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াত-শিবিরকে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর আগে দুই নেত্রীর মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথনের বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া রাজনৈতিক ফাঁদে পড়েছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি, এমন কথাই প্রচার পায় বেশি। বিদেশিরাও এই প্রচারকে আমলে নেন। কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ করা হলে তাতে খালেদা জিয়ার ক্ষোভ এবং অনমনীয় মনোভাবের কথাই মানুষ বেশি জানতে পারে।
তবে এ দেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের বেশির ভাগই মনে করেন, বাংলাদেশের দুই নেত্রীই একে অপরকে শাস্তি দিতে চান। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, সন্তানদের বিদেশে পাঠানো, নিজের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলার ঘটনায় খালেদা জিয়া সবার আগে প্রধানমন্ত্রীকেই শাস্তি দিতে চান। তিক্ত পরিস্থিতিতে ক্ষমতা ছাড়ার পর জনগণের সহানুভূতি যাতে প্রধানমন্ত্রীর ওপর না থাকে তেমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করাই প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার লক্ষ্য।
এসব কূটনীতিক এটাও বিশ্বাস করেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরে যাওয়ায় সরকার তার জনপ্রিয়তা আঁচ করতে পারে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাননি বিরোধী দল নির্বাচনে আসুক। তিনি সংলাপ ও আলোচনার মারপ্যাঁচে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে নানা কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর, তা রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে মোকাবিলা করতে পারেনি বিএনপি।
আবার এটাও ঠিক, টানা অবরোধ কর্মসূচি ও সহিংস পরিস্থিতির কারণে বিরোধী দল ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। আবার সরকারও পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দুই দলের ওপরই মানুষ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, সংলাপ নিয়ে যা কিছু হয়েছে তাতে বিরোধী দলের চেয়ে সরকারই সুফল পেয়েছে বেশি। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো সরকারি দলের ওপর কোনো রকম চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে এগিয়ে গেছে।
অন্যদিকে নির্বাচনের তারিখ পেছানো যায় কি না, তারানকো তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানালেও প্রসঙ্গটি কৌশলে এড়িয়ে গেছে সরকার। নির্বাচন পেছানোর বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের—এমন অজুহাত দেখিয়ে সরকার নিজের অবস্থানে অনড় থাকে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলেছে, সমঝোতা না হলে নির্বাচন পিছিয়েও লাভ নেই।
অবশ্য বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, যে সংলাপ শুরু হয়েছিল বর্তমান নির্বাচন ঘিরে, তা এখন গুরুত্বহীন। ঢাকার বাইরে কোথাও এখন আর সরকার নেই। তিনি দাবি করেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকার নিজেই তার ফাঁদে পড়বে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের ঘটনা সরকারের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পাকিস্তানের এই নিন্দনীয় ভূমিকার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবার মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। পাকিস্তানের ওই অবস্থানের বিষয়ে বিএনপি চুপ থাকায় সরকারি দলের নেতারা বিএনপিকে আরেক দফা ঘায়েল করার সুযোগ পেয়েছেন।
সার্বিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে অন্য দল থেকে মনোনীত প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক যে খেলা চলছে তার নিয়ন্ত্রণ পুরোটা সরকারের কাছে নেই। যারা খেলছে তারাই এর ভবিষ্যৎ বলতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত খেলার মাঠ সরকারের দখলে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বদির আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ

আব্দুল কুদ্দুস, কক্সবাজার
 
বদি
স্ত্রী-ভাই-বোন ও নিজের কর্মচারীর কাছ থেকে আট লাখ টাকা ধার করে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ করেছিলেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাংসদ আবদুর রহমান বদি। জীবনে প্রথম সাংসদ হয়ে পাঁচ বছরে তাঁর আয় বেড়ে গেছে ৩৫১ গুণ। আর নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত এই সাংসদের জমা দেওয়া হলফনামা ও আয়কর বিবরণী পর্যালোচনা করে তাঁর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির এই চিত্র পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, হলফনামায় সাংসদ বদি কেবল আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে অপ্রদর্শিত অনেক অর্থ-সম্পদ রয়েছে।
সাংসদ বদি এবারও একই আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী। তিনি গত ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া দলের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামার মাধ্যমে আয়বিবরণী ও সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকনাফে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে এ টাকা অর্জন করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
হলফনামা অনুযায়ী, সাংসদ বদির এখন বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছেন, তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। আর ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা।  তখন (২০০৮) বিভিন্ন ব্যাংকে আবদুর রহমানের মোট জমা ও সঞ্চয়ী আমানত ছিল ৯১ হাজার ৯৮ টাকা। পাঁচ বছরের মাথায় এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২৩৭ টাকা। তাঁর হাতে ২০০৮ সালের নভেম্বরে নগদ টাকা ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৪৮ টাকা। আর এখন ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া এখন স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৫ টাকা।
২০০৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, ওই নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে বদি তাঁর স্ত্রী শাহীন আকতারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা এবং বোন নাজমা আকতার, ভাই আমিনুর রহমান, আবু তাহের ও নিজের কর্মচারী মং উইন মিনথের কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে নিয়েছিলেন। তখন তিনি দোকান ও বাড়ি ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় দেখান এক লাখ ৭৬ হাজার ৮৮০ টাকা। ব্যবসা থেকে কোনো আয় ছিল না।
আর, এবারের (২০১৩) হলফনামায় বলেছেন, তিনি এখন বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় করছেন দুই কোটি আট লাখ ১৩ হাজার ৩২ টাকা। আর ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় পাঁচ কোটি ৩২ লাখ ৩১ হাজার ১১৬ টাকা।
পাঁচ বছর আগে তাঁর দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দামের একটি অকেজো ল্যান্ড রোভার গাড়ি ছিল। এখন ওই গাড়ি ছাড়াও তাঁর ৬৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকার একটি জিপ গাড়ি রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।
গত ২১ নভেম্বর কক্সবাজার কর সার্কেলে দাখিল করা আয়কর বিবরণীতে বদি তাঁর মোট আয় দেখিয়েছেন সাত কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৮ টাকা। আর নিট সম্পদের পরিমাণ বলা হয়েছে নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৩ টাকার। পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালের আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৮৮০ টাকা। আর নিট সম্পদ ছিল ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৩ টাকার।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় বদির কাছে নগদ টাকা ছিল না। নির্বাচন করার জন্য তখন তিনি ১০ লাখ টাকা চেয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছিলেন। সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি টেকনাফ স্থলবন্দরের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। নিজের চার ভাইসহ নিকটাত্মীয়দের কাজে লাগিয়ে বৈধ-অবৈধ উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।
এ ছাড়া টেকনাফ সীমান্তে তৎপর মাদকদ্রব্য ইয়াবা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে সাংসদ ও তাঁর নিকটাত্মীয়দের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়টি পাঁচ বছর ধরেই গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও মাদক চোরাচালানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ বদি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম এসেছে। গত ১০ ডিসেম্বর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেড় লাখ ইয়াবা বড়িসহ কয়েকজন চোরাকারবারিকে আটক করে। পরে তাঁদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সাংসদ বদির ভাই আবদুস শুক্কুরকে আসামি করে থানায় মামলা করে বিজিবি।
অবশ্য আবদুর রহমান বদি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ইয়াবা চোরাচালানে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ জড়িত নয়। মাদক কারবারিরা নিজেরা রক্ষার জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে টেকনাফকেন্দ্রিক চোরাই কাঠের ব্যবসা ও চিংড়ি ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করেন সাংসদ বদি। এসব অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। তাঁর দাবি, তিনি বৈধ ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন। শীর্ষস্থানীয় করদাতা হিসেবে পর পর দুবার সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন।

ফুলে-ফেঁপে উঠেছে সম্পদ

নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা থেকেই ক্ষমতায় থেকে সম্পদশালী হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে।মন্ত্রী-সাংসদদের একটি অংশ পাঁচ বছরে অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হয়েছে। ক্ষমতা নামের আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ বদলে দিয়েছে তাঁদের স্ত্রীদেরও। অথচ দৃশ্যমান তেমন কোনো আয় অনেকেরই নেই।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা থেকে তাঁদের স্বেচ্ছায় ঘোষিত এই সম্পদের হিসাব জানা গেছে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে এসব তথ্য সাধারণের জন্য কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
নতুন এই তথ্যের সঙ্গে আগের নির্বাচনের সময় ২০০৮ সালে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মন্ত্রী-সাংসদদের অনেকেই অতি দ্রুত সম্পদশালী হয়েছেন। কেউ কেউ পাঁচ বছরে একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। এই সরকারের পাঁচ বছরে শেয়ারবাজারে যত বড় কেলেঙ্কারিই ঘটুক, মন্ত্রী-সাংসদদের একটি অংশ সেখানে বিনিয়োগ করতেও পিছপা হয়নি।
আব্দুল মান্নান খান (ঢাকা-১): আব্দুল মান্নান খান ছিলেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী। একসময়ের বাম রাজনীতি করা আব্দুল মান্নান খান পাঁচ বছরেই অস্বাভাবিক অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনকে তিনি যে হলফনামা দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যায়, নিতান্তই সাধারণ জীবন যাপন করতেন তিনি। কিন্তু পাঁচ বছরেই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে তাঁর। ২০০৮ সালে এই আয় ছিল ২৬ লাখ ২৫ হাজার, নির্ভরশীলদের কোনো আয়ই ছিল না। পাঁচ বছর পর তিনি ও তাঁর স্ত্রী বা অন্য নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় হয়ে গেছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা।
আয়ের তুলনায় আব্দুল মান্নান খানের পরিবারের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে বহুগুণ। পাঁচ বছর আগে তাঁর সম্পদ ছিল প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকার। আর এখন সেই সম্পদ হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকার। পাঁচ বছরে ১০৭ গুণ বেশি সম্পদ বাড়ার এটি একটি নতুন রেকর্ড।
আব্দুল মান্নান খানের আয়ের বড় উৎস হচ্ছে মৎস্য ও প্রবাসী-আয়। এখান থেকে তাঁর আয় এক কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। একই খাতে তিনি নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়েছেন এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই আয়ের কোনো বিস্তারিত বিবরণ তিনি কোথাও দেননি।
মান্নান খানের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিজের ও স্ত্রীর কাছে নগদ ৫৫ লাখ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত হিসেবে নিজের নামে ৪৩ লাখ ও স্ত্রীর নামে সাড়ে ছয় লাখ টাকা এবং ৪৪ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া পাঁচ একর কৃষিজমি। এ ছাড়া নিজ নামে ৩১ লাখ ৭৪ হাজার এবং স্ত্রীর নামে এক কোটি ৬৪ লাখ টাকার অকৃষি জমি রয়েছে। তাঁর আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য এক কোটি ৮১ লাখ টাকা। অ্যাপার্টমেন্টের দাম এক কোটি ৮১ লাখ টাকা। মাছের খামার পাঁচটি থাকলেও তার মূল্যমান উল্লেখ করেননি।
মির্জা আজম (জামালপুর-৩): আওয়ামী লীগের এই সাংসদের নামে বিভিন্ন সময়ে মোট নয়টি মামলা থাকলেও সব কটি মামলা থেকে খালাস অথবা অব্যাহতি পেয়েছেন। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম মির্জা রাইস মিল অ্যান্ড পোলট্রি ফিড ট্রেডিং ও মির্জা পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড ট্রেডার্স।
মির্জা আজমের বার্ষিক আয় কৃষিতে ৬৬ হাজার, মাছ থেকে ছয় লাখ ৩৭ হাজার, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে দুই লাখ ৯৫ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর আয় ছিল চার লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে মির্জা আজম ও তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ১৮ লাখ টাকা করে জমা আছে। ব্যাংকে আছে ১১ লাখ টাকা। পুঁজিবাজার ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। স্থায়ী আমানত হিসাবে রয়েছে ৮৪ লাখ টাকা। তাঁদের গাড়ির মূল্য ৮৩ লাখ টাকা। অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ ২৩ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮০ লাখ টাকার মতো। তবে পুঁজিবাজারে তাঁর কোনো বিনিয়োগ ছিল না।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষিজমির মূল্য ২০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে চার একর জমির মূল্য নয় লাখ ৯৫ হাজার টাকা, অকৃষিজমির মূল্য দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মূল্য এক কোটি ২১ লাখ এবং অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য তিন কোটি ৭১ লাখ টাকা। ঋণের পরিমাণ ১১ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির আর্থিক মূল্য ছিল ২০ লাখ টাকার মতো।
সব মিলিয়ে ২০০৮ সালে মির্জা আজম ও তাঁর স্ত্রীর মোট সম্পদ ছিল এক কোটি ৯১ লাখ টাকার। আর এখন সেই সম্পদ বহুগুণ বেড়ে হয়েছে ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার।
নুর-ই-আলম চৌধুরী (মাদারীপুর-১): পাঁচ বছরে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নূর-ই-আলম চৌধুরী। তাঁর স্ত্রীও তাঁরই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সম্পদশালী হয়েছেন।
বর্তমানে বার্ষিক আয় ১০ কোটি টাকার মতো। অথচ ২০০৮ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল মাত্র চার লাখ ৪৮ হাজার টাকা। আবার ২০০৮ সালে দেওয়া হলফনামায় তাঁর স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। আর এখন তাঁর স্ত্রীর আয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। বর্তমানে তাঁর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ২২ কোটি টাকার মতো। একই খাতে ২০০৮ সালে তাঁর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ২৭ লাখ টাকার মতো। বর্তমানে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির আর্থিক মূল্য এক কোটি ৬০ লাখ টাকার মতো। ২০০৮ সালে এই খাতে তাঁর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল ১০ লাখ টাকার মতো।
জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩): সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামে বিভিন্ন সময়ে ১৪টি মামলা ছিল। বর্তমান সরকারের মেয়াদে তিনি সব মামলা থেকে অব্যাহতি অথবা খালাস পেয়েছেন। মন্ত্রী হওয়ার পর পাঁচ বছরে তিনিও যথেষ্ট সমৃদ্ধিশালী হয়েছেন। তবে তাঁকেও ছাড়িয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী।
পাঁচ বছর আগেও এই দম্পতির সম্পদ ছিল এক কোটি টাকারও কম। এখন সেই সম্পত্তির পরিমাণ হয়েছে সোয়া আট কোটি টাকা। এর মধ্যে স্ত্রীর সম্পদ হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকা। অথচ এর আগের হলফনামা অনুযায়ী, সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর ছিল মাত্র ৫২ লাখ টাকা।
জাহাঙ্গীর কবির নানকের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ১১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা এবং সঞ্চয়ী আমানত ২৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। তাঁর যানবাহনের আর্থিক মূল্য ৬৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর নামে নগদ ৮১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৭৯ লাখ, পুঁজিবাজারে এক কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল সাত লাখ ৪৩ হাজার টাকা। একই সময়ে তিনি ও তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ছিল ১১ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ছিল আড়াই লাখ, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ছয় লাখ টাকা।
নানকের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষিজমি দুই একর (মূল্য অজানা)। তাঁদের আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের দাম এক কোটি ৩০ লাখ, স্ত্রীর নামে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অগ্রণী ব্যাংকে তাঁদের দেনার পরিমাণ দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর কোনো বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবনের উল্লেখ ছিল না।
ফজলে নূর তাপস (ঢাকা-১০): সাংসদ ফজলে নূর তাপসের বার্ষিক আয় দুই কোটি ১১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। অথচ ২০০৮ সালে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ২২ লাখ টাকা। পেশায় আইনজীবী ফজলে নূরের আয় হয়েছে এক কোটি ১৪ লাখ টাকা। অন্যান্য আয় এসেছে কৃষি খাত, পুঁজিবাজার ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে।
তাপসের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ছয় কোটি দুই লাখ ৭৬ হাজার টাকা, ব্যাংকে ছয় কোটি দুই লাখ ৩৯ হাজার, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ৩২ কোটি ১৪ লাখ এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তিন কোটি তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে ২৫ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার। আসবাবের মূল্য ১১ লাখ। তাপসের স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ২৪ লাখ ৭২ হাজার এবং পুঁজিবাজার ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে ৭০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর কাছে নগদ ছিল ৮৯ লাখ টাকা। ব্যাংকে ছিল এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা।
তাপসের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কৃষিজমির পরিমাণ দুই বিঘা (মূল্য উল্লেখ নেই), মতিঝিলে একটি ভবন (মূল্য উল্লেখ নেই), ১০ কাঠা অকৃষিজমির মূল্য দুই কোটি ৪৬ লাখ, অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য এক কোটি চার লাখ এবং চা ও রাবার বাগানের মূল্য ১২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। তাঁর স্ত্রীর নামে ধানমন্ডিতে একটি প্লটের মূল্য এক কোটি ৬৬ লাখ টাকা, রাবার ও চা-বাগানের মূল্য এক কোটি দুই লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তাপস বা তাঁর স্ত্রী কোনো অ্যাপার্টমেন্ট এবং চা বা রাবার বাগানের মালিক ছিলেন না।
হাছান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭): পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদের তুলনায় বেশি সম্পদশালী হয়েছেন তাঁর স্ত্রী। হাছান মাহমুদের বার্ষিক আয় ১৮ লাখ টাকার বেশি। আর স্ত্রীর আয় প্রায় দুই কোটি টাকা। ২০০৮ সালে তাঁদের বার্ষিক আয় ছিল ১৯ লাখ টাকার কিছু বেশি।
হাছান মাহমুদের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ছয় লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা আট লাখ, নয় লাখ টাকার শেয়ার, ৬৬ লাখ টাকার একটি গাড়ি ইত্যাদি। তাঁর স্ত্রীর কাছে রয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার। ২০০৮ সালে তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ও ব্যাংকে জমা মিলিয়ে মোট ৬০ হাজার টাকা ছিল, কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। বর্তমানে তাঁর স্থাবর সম্পত্তির দাম চার কোটি টাকার মতো।
ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ (ঢাকা-১৬): সরকারদলীয় সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ পাঁচ বছর আগে কৃষি থেকে ২১ লাখ টাকা আয় করলেও এখন কৃষি থেকে তাঁর কোনো আয় নেই। ব্যবসা থেকে তাঁর আয় ছিল ৩০ লাখ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। এ টাকা তিনি মৎস্য প্রকল্প থেকে আয় করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। আগে বাড়িভাড়া থেকে কোনো আয় না হলেও বর্তমানে ২৮ লাখ টাকার বেশি আয় করেন। বর্তমানে এই সাংসদের মোট বার্ষিক আয় পাঁচ কোটি ৪২ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৬ টাকা।
পাঁচ বছর আগে ইলিয়াস মোল্লাহ্র অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল এক কোটি পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে হয়েছে সাত কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩ টাকা। আগে কোনো গাড়ি না থাকলেও এখন তিনি দুটি গাড়ির মালিক। হলফনামায় গাড়ি দুটির নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হলেও মূল্য লেখা হয়নি। এর আগের হলফনামায় স্ত্রী বা নির্ভরশীলের নামে ৭৫ লাখ নগদ টাকা দেখানো হলেও এবারের হলফনামায় স্ত্রীর নামে কোনো নগদ অর্থ দেখানো হয়নি।
নজরুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ-২): নির্বাচনী হলফনামা অনুসারে তাঁর বার্ষিক আয় ৯৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে মৎস্য চাষ থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৪৩ লাখ ২০ হাজার এবং কৃষি খাত থেকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে ছিল বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্ত্রীর নামে রয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে ছিল ১৭ লাখ টাকা। আর স্থাবর সম্পত্তি তিন কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ জমি, যার মূল্য দেখানো ছিল চার লাখ ৬০ হাজার টাকা।
দীপংকর তালুকদার (রাঙামাটি): পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের বার্ষিক আয় ৫৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। আয়ের উৎস ব্যবসা ও বাড়িভাড়া। ২০০৮ সালে এই আয় ছিল সাত লাখ টাকা।
প্রতিমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য দুই কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে নগদ অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে নগদ ছয় লাখ ৭৩ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং মোটরযানের দাম ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ছিল মাত্র সাত লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
দীপংকর তালুকদারের স্থাবর সম্পত্তির আর্থিক মূল্য এক কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে আছে পূর্বাচল নতুন শহরে ১০ কাঠা জমি (৩১ লাখ ৪০ হাজার ) এবং রাঙামাটির চম্পকনগরের পাঁচতলা বাড়ি (৮৯ লাখ ৩২ হাজার)। ২০০৮ সালে স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে চম্পকনগরের বাড়িটি। বর্তমানে তাঁর স্ত্রীর সম্পদের মূল্য ৬০ লাখ টাকার বেশি। অথচ ২০০৮ সালে তাঁর স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ৪৯ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণ (দুই লাখ ৫০ হাজার)।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আব্দুল মান্নান খান, মির্জা আজম, নূর-ই-আলম চৌধুরী ও ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো উত্তর তাঁরা দেননি।
[প্রতিবেদন তৈরি করেছেন হারুন আল রশীদ, মানসুরা হোসাইন, মোশতাক আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, পার্থ শঙ্কর সাহা, কুন্তল রায় ও মোছাব্বের হোসেন।]

AD BANNAR