Friday, 1 November 2013

বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুত: রিজভী

বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুত: রিজভী

বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুত— রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। ছবি: শহীদুল ইসলামবিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘দেশের শান্তি ও মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো সংলাপ বা আলোচনায় বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু শান্তি বজায় রাখতে এবং ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার যে কিছু করবে, তা এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’

রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার একদিকে সংলাপের কথা বলছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে দমনপীড়ন চালাচ্ছে। সংলাপ ও নিপীড়ন একসঙ্গে চলতে পারে না।

রিজভী বলেন, ‘সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায়। আমরা আন্দোলনের মধ্যে আছি, সংগ্রামের মধ্যে আছি। বিএনপি ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিতে জানে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন দিয়ে হলেও বিজয় অর্জন করে আমরা ঘরে ফিরব।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নেতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রমুখ।
এদিকে, ৬০ ঘণ্টার হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিহত ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে জুমার নামাজের পর নগরের সোনাদীঘি জামে মসজিদের সামনে গায়েবেনা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির নেতা রিজভীসহ ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন।

টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙবে কোহলি: গাভাস্কার

টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙবে কোহলি: গাভাস্কার

গত ওয়ানডেতে ৬১ বলে সেঞ্চুরি করার পর কোহলি। ছবি: বিসিসিআইঅন্য কেউ কথাটা বললে হয়তো এ নিয়ে বাঁকা চোখে তাকানো যেত। কিন্তু মন্তব্যটা খোদ সুনীল গাভাস্কারের। একসময় ক্রিকেট বিশ্বে চায়ের কাপের খোরাক ছিল এই আলোচনা—টেস্টে গাভাস্কারের ৩৪ সেঞ্চুরির রেকর্ড শচীন টেন্ডুলকার ভাঙতে পারবেন কি না? সেই গাভাস্কার এখন আলোচনা জমিয়ে দিলেন—টেন্ডুলকারের ওয়ানডের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড কি বিরাট কোহলির হাতেই ভাঙতে চলেছে?

পরিসংখ্যানেও কিন্তু রয়েছে তারই পূর্বাভাস। ১১২ ওয়ানডেতে ইনিংসে ৪৯১৯ রান করেছেন কোহলি। সেঞ্চুরি ১৭টি! ১১২ ওয়ানডে ইনিংস খেলার পর টেন্ডুলকারের নামের পাশে ছিল ৪০০১ রান। সেঞ্চুরি ছিল আটটি! ১৭ সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে সবচেয়ে কম সময় লেগেছে কোহলিরই। তাঁর পরে আছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। কিন্তু সৌরভের ১৭ সেঞ্চুরি এসেছিল ১৭০ ওয়ানডে ইনিংসে। সাঈদ আনোয়ার ১৭ সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৭৭ ওয়ানডে ইনিংসে। ক্রিস গেইলের লেগেছে ১৮২টি ওয়ানডে ইনিংস। আর যাঁর সঙ্গে তুলনা হচ্ছে, সেই টেন্ডুলকারের ১৭টি সেঞ্চুরি করতে লেগেছিল ১৮৯টি ওয়ানডে ইনিংস।
টেস্ট রেকর্ডের দিক দিয়ে টেন্ডুলকার হয়তো নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছেন। তবে কোহলির ব্যাটে যে পূর্বাভাস, তাতে গাভাস্কার মনে করেন, ৪৯ ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়তো এই ভারতীয়ই ভেঙে দেবেন, ‘রেকর্ড তো গড়াই হয় ভাঙার জন্য। আমরা জানি টেন্ডুলকারের কিছু রেকর্ড ধরাছোঁয়ার বাইরে। যেমন ২০০ টেস্ট ম্যাচ কিংবা ৫১টি টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে বিরাট যেভাবে ব্যাট করছে, তাতে ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেওয়া সম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। বিরাটের আরও ৩২টি সেঞ্চুরি দরকার টেন্ডুলকারকে ধরে ফেলতে। ভারত এখন যে পরিমাণ ওয়ানডে খেলে, তাতে ওর পক্ষে এটা করাই সম্ভব। এই ক্রিকেট মৌসুমেই বিরাটের পক্ষে ২০-২২ সেঞ্চুরিতে চলে যাওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের চলমান ওয়ানডে সিরিজে গত ১৫ দিনেই কোহলি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পক্ষে তিনটি দ্রুততম সেঞ্চুরির দুটো করে ফেলেছেন। কোহলির সৌজন্যেই ভারত সিরিজে পিছিয়ে পড়েও সমতা ফিরিয়েছে। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৫২ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন, যেটি ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ষষ্ঠ ওয়ানডেতে কোহলি সেঞ্চুরি করেছেন ৬১ বলে।
টেন্ডুলকারের বিদায়ের পর ভারতীয় ক্রিকেটে যে বিরাট শূন্যতা তৈরি হবে, সেটি বিরাট কোহলির ব্যাটেই পূর্ণ হবে বলে মনে করেন গাভাস্কার, ‘বিরাট সত্যিই অসাধারণ।। আপনি যদি টেন্ডুলকার ১১৫ ওয়ানডে খেলার পর কী করেছিল, সেটাও ওর সঙ্গে তুলনা করেন, বিরাট অনেক এগিয়ে আছে। শচীনের জন্য প্রথম সেঞ্চুরিটা পেতেই ৮০টির মতো ওয়ানডে খেলতে হয়েছিল।’
ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা কয়েকজন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে একই দলে খেলার অভিজ্ঞতাও কোহলিকে সাহায্য করেছে বলে মনে করেন গাভাস্কার, ‘ভারতের সৌভাগ্য বিরাটের মতো প্রতিভা উঠে এসেছে। বাস্তবতা হলো, ও নিজের উঠতি বয়সটায় শচীন, বীরেন্দর শেবাগ, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণের মতো ব্যাটসম্যানের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরেছে।’
সর্বশেষ ১০ ওয়ানডে ইনিংসে চারটি সেঞ্চুরি, সর্বশেষ টানা পাঁচ ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব স্কোর—কোহলির এই ধারাবাহিকতার আসল রহস্যটাও ফাঁস করলেন গাভাস্কার, ‘ও কন্ডিশন আর ম্যাচের পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে পড়তে পারে। ও প্রতিপক্ষ সম্পর্কেও খুব ভালো জানে। এ কারণেই ও এত ধারাবাহিক।’
ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা কোহলি পরের ম্যাচে ৮১ রান করতে পারলে ভেঙে দেবেন ভিভ রিচার্ডসের গড়া দ্রুততম সময়ে ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রান পূর্ণ করার রেকর্ড। ওয়ানডের নিয়ম পরিবর্তন করে খেলাটিকে পুরোপুরি ব্যাটসম্যান-বান্ধব করে ফেলাটাও কোহলির পক্ষে গেছে বলে মনে করেন গাভাস্কার।
টি-টোয়েন্টির এই যুগে কোহলির রকেট-গতিতে ছোটা টেন্ডুলকারের রেকর্ড সত্যিই চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে!

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুজনের প্রস্তাব

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সুজনের প্রস্তাব

সুজনের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা। ছবি:  জিয়া ইসলামনির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেওয়া এ প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন মহাজোট থেকে পাঁচজন সাংসদ, বিরোধী ১৮-দলীয় জোট থেকে পাঁচজন এবং একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি (যিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন) নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে।

সংগঠনটির পক্ষে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজনের আহ্বান’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রস্তাবটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের নিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে শর্ত সাপেক্ষে ১১ জনকে খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। শর্তটি হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে এবং নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।
বিকল্প প্রস্তাব
বিকল্প আরেকটি প্রস্তাবে সুজন মহাজোট থেকে পাঁচজন সাংসদ, বিরোধী ১৮-দলীয় জোট থেকে পাঁচজন এবং দলনিরপেক্ষ পাঁচজনকে (যাঁর একজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন) নিয়ে সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে বিকল্প এ প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার্থে দলনিরপেক্ষ পাঁচজনকে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ফোনালাপ নিতান্তই লোকদেখানো উদ্যোগ
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ফোনালাপকে জনসংযোগের কৌশল (পাবলিক রিলেশন্স গিমিক) আখ্যায়িত করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ফোনালাপটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই বলছেন এটি ছিল নিতান্তই একটি লোকদেখানো উদ্যোগ। অথচ দুই নেত্রীর ফোনালাপে আমরা আনন্দিত হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধের একটি সমাধান হয়তো হবে।’ ফোনালাপ রেকর্ড ও প্রকাশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এজন্য অনেকে তথ্যমন্ত্রীর দিকে অঙুলি নির্দেশ করছেন, যদিও মন্ত্রী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে সন্দেহ দূর করা এবং দোষীকে চিহ্নিত ও শাস্তি দেওয়ার জন্য একটি তদন্ত প্রয়োজন।’
লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে এখানে ‘সংবাদ সম্মেলন’ না লিখে ‘অরণ্যে রোদন’ লেখা যেত। নির্বাচন নিয়ে সংলাপ দরকার। তার চেয়ে দেশের ভবিষ্যত্ নিয়ে সংলাপ আয়োজন আরও বেশি দরকার। সংসদে পাস হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ আরপিও অনুযায়ী চাইলে বেগম জিয়া বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচন করতে পারবেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এস এম শাহজাহান বলেন, ‘সংলাপের সম্ভাবনা এখন সুদূরপরাহত হয়ে গেছে। সংলাপ যেন সংঘাতের কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। জেদাজেদি গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দুই নেত্রী ভালো খেলোয়াড়। তবে বেশি খেলতে গেলে মার খাওয়ার আশঙ্কা আছে। তখন আপনাদের মরিয়া প্রমাণ করিতে হইবে আগে মরেন নাই।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনী ক্ষণগণনার ৯০ দিনের মধ্যে সাত দিন চলে গেছে। সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদেরও দলীয় আনুগত্যের বাইরে এসে কিছু করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু সাংসদরাই নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। স্থানীয় সরকারেও অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন এবং বিদ্যমান সংকট নিরসনে তাঁরাও এগিয়ে আসতে পারেন।
সবশেষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান ধন্যবাদ বক্তব্যে বিদ্যমান সংকট সমাধানে সব পক্ষ উদ্যোগী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
@ Prothom alo

AD BANNAR